অনলাইন ডেস্ক:
মহাসড়কে থ্রি হুইলার ও ইজি বাইক চলতে পারবে না বলে আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের এসংক্রান্ত আদেশ সংশোধন করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।
এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অবৈধ থ্রি হুইলার ও ইজি বাইক চিহ্নিত করে অপসারণ করতে। হাইকোর্টের এ আদেশ সংশোধন চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন বাংলাদেশ ইলেকট্রিক থ্রি হুইলার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজি কামাল উদ্দীন আহমেদ ও সেক্রেটারি মো. আহসান সামাদ।
ওই আবেদনের শুনানির পরেই হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন করে আদেশ দিলেন।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানিয়া আমীর ও মনিরুজ্জামান আসাদ।
আইনজীবী তানিয়া আমীর পরে বলেন, ‘হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন দেশের সব রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার, ইজি বাইক অপসারণ করতে। আমরা আপিল বিভাগে আবেদন করে উল্লেখ করলাম, এসব যানবাহনের সাথে দেশের হাজার হাজার মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে। তা ছাড়া এসব যানবাহন আমদানি, প্রস্তুত ও চলাচলে খসড়া নীতিমালা করেছে সরকার। সে নীতিমালায় মহাসড়কে এসব পরিবহন চলার অনুমোদন রাখা হয়নি। তা ছাড়া পেট্রোল পাম্পের মতো সড়কে চার্জার স্টেশন রাখার কথা বলা হয়েছে ওই নীতিমালায়। আর লিথিয়াম ব্যাটারির এখন যেসব ইজি বাইক চলছে এগুলো ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হয়ে যাবে। ফলে এ পরিবহনটি পরিবেশবান্ধবও হয়ে উঠবে। আপিল বিভাগ আমাদের আবেদন দেখে হাইকোর্টের আদেশটি সংশোধন করে আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ব্যাটারিচালিত এসব থ্রি হুইলার ও ইজি বাইক মহাসড়কে চলতে পারবে না। ‘
থ্রি হুইলার ও ইজি বাইকের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বা স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১৩ ডিসেম্বর এই রিট আবেদন করেন বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেডের সভাপতি কাজী জসিমুল ইসলাম।
রিটে বলা হয়, দেশে ৪০ লাখের বেশি থ্রি হুইলার ও ইজি বাইক চলছে। ব্যটারিচালিত এসব যানবাহন চলাচলের কোনো অনুমতি নেই। বুয়েট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তা ছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এসব ইজি বাইক বা থ্রি হুইলারের ব্যটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
রিটে আরো বলা হয়, পরিবেশবান্ধব, সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চলে এমন একটি ইজি বাইক স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করে বাজারে আনতে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সে কারণে দেশে অনুমোদন ছাড়া যেসব ইজি বাইক বা থ্রি হুইলার চলছে, সেগুলো বন্ধ করতেই এই রিট আবেদন। এর আগে অবৈধ থ্রি হুইলার, ইজি বাইকের আমদানি ও নির্মাণ বন্ধের জন্য গত বছররে ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন রিট আবেদনকারী।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত অবৈধ থ্রি হুইলার ও ইজি বাইক চিহ্নিত করে অপসারণের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে রুল জারি করেন। অবৈধ থ্রি হুইলার ও ইজি বাইকের অমাদানি, নির্মাণ ও চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
শিল্পসচিব, সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশসচিব, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
আপিল বিভাগ এ রুলটি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান আইনজীবী তানিয়া আমীর।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন