ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি:
১২-১৩ বছর বয়সে মেয়েটির জন্মগত ‘নারীত্ব ত্রুটি’ ধরা পড়ে। দেশে একাধিক অস্ত্রোপচারেও সেটি সারিয়ে তোলা যাচ্ছিলো না। প্রবাসে গিয়ে একাধিকবার চিকিৎসা করেও সেই ত্রুটি সারেনি। বিয়ে, সন্তান জন্ম দেওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি মেয়েটি ও তার পরিবারের।
অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজে হওয়া অস্ত্রোপচারে সেই মেয়েটি এখন পূর্ণাঙ্গ নারীতে রুপান্তরিত হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষায়, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়েটির ভেজাইনাল এজেনেসিস (মাসিকের রাস্তা অনুপস্থিত) এর জটিলতা দূর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতকের ফুলের পর্দা (এমনিওগ্রাফট) প্রতিস্থাপন করে তার মাসিকের রাস্তা পূর্ণগঠন করে মেয়েটিকে নতুন জীবনে আনা হয়েছে। মেয়েটি বিয়ে করার উপযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি সন্তানও ধারণ করতে পারবে।
রবিবার (২০ মার্চ) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হওয়া এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় চিকিৎসা বিষয়ে একটি স্লাইড প্রদর্শন করা হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা এ সময় উপস্থিত অন্যান্য চিকিৎসকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজের গাইনী বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. রনজিৎ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. আবু সাঈদ।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফৌজিয়া আখতার, এনেস্থিসিয়া বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. খোকন দেবনাথ, গাইনী বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. গোপা পাল, ডা. জিনান রেজা, ডা. লুৎফুর নাহার লুৎফা, ডা. শামিমা রহমান সুমি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসিমা আক্তার। স্লাইড প্রদর্শন করেন গাইনী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়মা রহমান ইমা।
ওষুধ কোম্পানি এসিআই লিমিটেড এর আয়োজনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ধীতপুর গ্রামের ওই মেয়ের সঙ্গেও কথা হয় প্রতিবেদকের। বর্তমানে ২১ বছর বয়সী ওই মেয়েটির মনে এখন খুশির ঝিলিক। নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নের পাশাপাশি সে এখন বিয়ে ও সন্তান ধারণ করতে পারবে। মেয়েটি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চিকিৎসকদের প্রতি।
পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১২-১৩ বছর বয়সে পেটে ব্যথা অনুভব করায় চিকিৎসকের কাছে যায় মেয়েটি। ওই সময় মাসিকের রাস্তায় ত্রুটি ধরা পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। তবে এতে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। এরপর ঢাকার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। তখন থেকে অনিয়মিত মাসিক শুরু হয়।
মেয়েটির বাবা জানায়, সৌদি আরব, ওমান ও জদার্ন পাঠানো হয় তার মেয়েকে। উদ্দেশ্য কাজের পাশাপাশি যেন সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন। তবে অভিভাবক না থাকায় সেখানকার কোনো হাসপাতালের চিকিৎসকরাই ঝুঁকি নিতে চাননি। অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসে মেয়েটি।
চিকিৎসক রনজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘জন্মগতভাবেই মেয়েটির মাসিকের রাস্তা বন্ধ ছিল। ৫ মার্চ মেয়েটির অস্ত্রোপচার করা হয়। ভেজাইনার অংশে মাংস কেটে সেখানে নবজাতকের ফুলের পর্দা (এমনিওগ্রাফট) প্রতিস্থাপন করে তার মাসিকের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে স্থায়ীভাবে তার মাসিকের রাস্তা তৈরি হয়েছে। এখন মেয়েটি বিয়ে করে স্বামীর সংসার করাসহ সন্তান ধারণ ও জন্ম দিতে পারবে। বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়েটিকে কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।