অনলাইন ডেস্ক:
ব্যাপক কোনো প্রস্তুতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটির অডিও-ভিডিও রেকর্ড করা যায়নি। যতটুকু করা গেছে, ততটুকু সমন্বিতভাবে প্রচার বা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার হওয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তান সরকারের হস্তক্ষেপে সম্ভব হয়নি। এর চিত্রায়ণও বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাকির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত।
এ ধরনের ভাষণ ধারণ করার মতো প্রযুক্তিও তখন তেমন ছিল না। যা ছিল তা বেশ ভারী ও আয়তনসমৃদ্ধ।
তবে সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাহউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবুল খায়ের এমএনএ ভাষণটি ধারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এম আবুল খায়ের এমএনএ ছিলেন তৎলীন ফরিদপুর-৫ আসনের [বর্তমান গোপালগঞ্জ-১] নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তাঁদের এ কাজে সাহায্য করেন অভিনেতা আবুল খায়ের। তিনি তখন সরকারের ফিল্ম ডিভিশনের ডিএফপি কর্মকর্তার পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞ সচল ক্যামেরা বিশেষজ্ঞও ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আরো যুক্ত হলেন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এন এইচ খন্দকার।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ চলাকালে এম আবুল খায়ের এমএনএর তত্ত্বাবধানে টেকনিশিয়ান এন এইচ খন্দকার মঞ্চের নিচ থেকে ভাষণটির অডিও ধারণের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে অভিনেতা আবুল খায়ের মঞ্চের এক পাশ থেকে সচল ক্যামেরা নিয়ে চিত্র ধারণ করেন। সেই সময়ের ক্যামেরাগুলো বেশ বড় আকারের হওয়ায় আবুল খায়েরের একার পক্ষে সেটা নাড়াচাড়া করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এক জায়গায় স্থির থেকে যতটুকু পেরেছেন, ধারণ করেছিলেন। আর এ কারণেই ৭ই মার্চের ১০ মিনিটের একটি ভিডিওচিত্র আমরা দেখে থাকি। অন্যদিকে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে বেতারকর্মীরা সরাসরি ভাষণটি প্রচার করতে না পারলেও রেকর্ড সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন, যেটা পরদিন বাঙালি বেতারকর্মী ও আপামর জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেতারে প্রচার করা হয়।
এম আবুল খায়ের এমএনএ-র পুত্র বিশিষ্ট নজরুলসংগীত শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার বাধা দিতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বাবা মঞ্চের নিচে লুকিয়ে এমন একটা জায়গায় রেকর্ডিংয়ের যন্ত্রপাতি রাখলেন, যেন কেউ না দেখতে পারে। আমার বাবা প্রয়াত এম আবুল খায়ের এমএনএ ও প্রয়াত অভিনেতা আবুল খায়ের ছিলেন দুই বন্ধু। আমার বাবার একটি রেকর্ড কম্পানি ছিল—ঢাকা রেকর্ড। ফলে তিনি অডিও রেকর্ডের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, অন্যদিকে অভিনেতা আবুল খায়েরের যেহেতু ক্যামেরা জ্ঞান ভালো ছিল, তিনি ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। ’
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ। ৭ই মার্চের পরে ১০ দিনে রেকর্ডটি তৈরি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তাঁর হাতে অডিওর একটি কপি তুলে দেন তত্কালীন পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য এম আবুল খায়ের এমএনএ। যুদ্ধ চলাকালীন এর কয়েকটি রেকর্ডেড কপি নিয়ে ভারতে যান তিনি, সেখান থেকে রেকর্ড কম্পানি এইচএমভির উদ্যোগে ভাষণটির তিন হাজার কপি বিনা মূল্যে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সিদ্ধান্তে ভাষণ ছড়িয়ে দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।