বরগুনা প্রতিনিধি:
দখল ,দূষন ও নাব্যতা সংকটে বরগুনার খাকদোন নদী। চরম র্দূভোগে নৌ-পথে চলাচলকারী লঞ্চ যাত্রীরা। নাব্যতা সংকটের কারণে শুক্রবার (৪ ফ্রেরুয়ারী) সকালে বরগুনা নদীবন্দরে ভিড়তে পারেনি ঢাকা থেকে বরগুনা গামী এম ভি পূবালী ও রাজহংস নামের এ লঞ্চ দুটি। তাই মূল লঞ্চ ঘাট থেকে প্রায় ২/৩ কি:মি: শহরের অদূরে ঢলুয়া পোটকাখালী নামক স্থানে চরে লঞ্চ নোঙর করে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় পন্টুন না থাকায় লঞ্চ থেকে নামতে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। মালামাল সঙ্গে নিয়ে আসা যাত্রীদের পরতে হয় মহা বিড়ম্বনায়। এতে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । তবে নদীটি যে দখল মূক্ত ও ঠিকঠাক মত খনন হচ্ছে না এ নিয়ে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
প্রিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম (লঞ্চ যাত্রী) প্রতিবেদকে জানান, আমি ঢাকা থেকে লঞ্চে বরগুনায় আসি । লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আমাদের মূল ঘাটে না নামিয়ে ঢলুয়া নামক স্থানে চরে নামিয়ে দেয় । ঘাট থেকে দূরে নামিয়ে দেয়ায় আমাদের কষ্ট হয়। কি কারণে ঘাটে নামানো হচ্ছেনা জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ বলেন, লঞ্চ আর যাবে , নদীতে পানি কম । তিনি আরো জানান, নদী ঠিকমত খনন হচ্ছে না ও দখল মুক্তও হচ্ছে না। তাই আমাদের যাত্রীদের প্র্য়াই র্দূভোগে পড়তে হয়।
শহরের বাসিন্দা সোহেল নামে একজন প্রতিবেদকে বলেন, অনেক সময় বেকু দিয়ে নদী খনন করে মাটি কেটে নদীর পাড়েই রাখা হয়। ফলে বৃষ্টির পানিতে তা আবার নদীতে নেমে যায়। এতে নদীর মাটিতে আবার নদী ভরাট হয়ে যায়। তীরবর্তী মানুষে নদীর মাটি নিতে চাইলে বেকুর চালকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে মাটি দেয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, টাকা দিতে না চাইলে মামলার হুমকি দেয় বেকুর চালক । আমাকে ২ হাজার টাকা দিয়ে নদীর মাটি কিনতে হয়েছে।
সাধারণ মানুষের দাবী, নদী সঠিক নিয়মে খনন ও দখল মুক্ত করা প্রয়োজন। অন্যথায় নদী পথে চলাচলে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু- দৃষ্টি কামনা করছি।
এম ভি পূবালী -১ এর মাল কেরানী জাকির হোসেনের কাছে লঞ্চ পোটকাখালী চরে নোঙ্গর করে যাত্রী নামানোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদীতে পানি কম থাকায় লঞ্চ পল্টুনে আসতে পারে না। তাই পোটকাখালী চরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে লঞ্চ খালি করে পল্টুনে আসতে হয় । ৪/৫ বছর ধরে নদী খনন করলেও কোন কাজ হয়নি। তিনি আরো জানান, আজ যাত্রী নামিয়ে লঞ্চ খালি করে পল্টুনে আসতে চাইলেও ২টি লঞ্চ নদীর তলদেশে ২ বার মাটিতে বেজে যায়। পরে ১ ঘন্টা পরে পল্টুনে আসতে হয় । আমরা পোর্ট অফিসারকে বিষটি জানিয়েছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) বরগুনা নদী বন্দর কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ প্রতিবেদকে বলেন, নদীতে পলি পড়ায় নাব্যতা সংকটের কারণে লঞ্চ বরগুনা ঘাটে নোঙর করতে পারছে না। তাই পোটকাখালী চরে যাত্রী নামিয়ে দেয়া হয়। ড্রেজার দিয়ে ভাওয়ালকার এলাকায় নদী খনন চলমান আছে। তবে অনেক জায়গায় নদী খননে বাঁধা আসছে। এ ব্যাপারে আমি প্রশাসন ও আপনাদের সহযোগীতা চাই।
নদীর মাটি নিতে টাকা চাওয়া ও দখল মুক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ মাটি নিতে চাইলে নিতে পারবে । কোন টাকা নেওয়া হয় না। যদি কেউ নিয়ে থাকে অভিযোগ পেল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রশাসনের সহযোগীতা ছড়া দখল নদী মুক্ত করা সম্ভব নয়। দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের সহযোগীতা চাওয়া হবে।
অপরদিকে বরগুনা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত ভারানী খালের পুন: খনন কার্য প্রায় শেষের পথে। খাকদোন নদের এ শাখা ভারানীর খালটি বরগুনা শহরে বুক চিরে দক্ষিণে আট কিলোমিটার গিয়ে পায়রা নদীতে যুক্ত হয়েছে। ভারানীর খাল খাকদোন, বিশখালী এবং পায়রা এ ৩টি নদীর সাথে মেলবন্ধন করে দিয়েছে। ভারানীর খালের খনন কার্য শেষ হলে পুন:রায় প্রাণ ফিরে পাবে নৌপথ কেন্দ্রিক বরগুনার ব্যবসা বাণিজ্য। নদী ও খালের কারণে নৌপথ কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হবে ফের বরগুনা শহর । ভারানী খাল দখলমুক্ত ও পুনঃখনন হলেও দখলদারদের দৌরাত্ম্য ও দূষণে এক সময়ের প্রমত্তা খাকদোন এখন পরিনত হয়েছে মরা খালে। খাকদোন নদী দখলমুক্ত ও পুনঃখনন বরগুনা সাধারণ জনগনের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী।
জানাগেছে,ভারানী খাল বরগুনা জেলা প্রশাসনের ভূমি অফিস ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ডিসেম্বরে দখলমূক্ত করে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি পুনঃখননের প্রকল্প হাতে নিয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারানী খালের খনন কার্য শুরু করে। চট্টগ্রাম জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ ও পটুয়াখালী জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে এ খাল খননের প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায়। বরাদ্দে এই কাজের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে ২৬ থেকে ৩০ মিটার বা ৮৫ থেকে ১০০ ফুট ও নিম্ন স্তরের প্রস্থ ১২ মিটার বা ৩৯.৩৬ ফুট গভীরতা ১.৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বা ৫ ফুট থেকে ৬.৫০ ফুট। গত বছরের আগস্ট মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খনন কাজ শুরু করে। বর্তমানে খালটির খনন শেষের পথে। পুন: খনন করায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে খালটি।