Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
হাসপাতালে ভর্তি প্রতিবন্ধী শিশু, পালিয়ে গেলেন বাবা

হাসপাতালে ভর্তি প্রতিবন্ধী শিশু, পালিয়ে গেলেন বাবা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।

অভাব-অনটনে থাকা ৩ বছরের শারিরীক প্রতিবন্ধী অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে রেখে নিরুদ্দেশে হতভাগা বাবা! শিশুটির মায়ের অশ্রুজলে সিক্ত পুরো হাসপাতাল, বাঁধ সেধেছে নানান অসুস্থতা।

শিশুটির মা ও আন্টিরা আপাতত চিকিৎসার খরচ মেটালেও প্রতিবন্ধী শিশুটির চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের ৩য় তলায় শিশু বিভাগের ১০ নম্বর বেডে গেলেই দেখা মিলতো ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার শিশু সিদ্দিকের। ৩বছর বয়সী শিশুটির পাশে জন্মদাত্রী মা ছাড়া আপন বলতে কেউ নেই। শিশুটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় ৫দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করে সবার অগোচরে নিরুদ্দেশ হন তার বাবা।

জানা যায়, সিদ্দিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গত ২৩ জানুয়ারী। পিতার নাম ইসমাইল মিয়া। সে বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মুকন্দপুর গ্রামের মুগনপুর এলাকা বিল্লাল মিয়ার ছেলে ও কুয়েত প্রবাসী। হাসপাতালে ভর্তির সব নিয়মাবলী শেষ হওয়ার আগেই বাচ্চাকে বেডে রেখে বেরিয়ে যান তিনি।

তবে, মানবতার দূত হিসেবে হাজির হয়েছিল হাসপাতালটির নার্স, আয়া ও চিকিৎসকরা। অবুঝ সিদ্দিকের চাহনি আর মায়া জড়ানো হাসিতে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হযেছে শিশু বিভাগে। বাবা-হারা শিশুটিকে একনজর দেখতে উঁকি দেন হাসপাতালে ভর্তি অন্য শিশুদের বাবা-মায়েরাও।

এতকিছুর মধ্যেও শঙ্কা, শিশুটির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তার চোখ দু’টো কেবলই খুঁজে ফিরছে বাবাকে। অবশেষে সিদ্দিককে বাঁচানোর জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলেন জন্মদাত্রী মা কাকন চৌধুরী।

কাকন চৌধুরী জানান, ২০১৫ সালে কুয়েত প্রবাসী ইসমাইলের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় কাকনের। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি প্রতিবন্ধী ছেলে জন্মায়। করোনার কারন ইসমাইল ২০১৯ সালে দেশে আসে। আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। তার একমাত্র ছেলে শিশুটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বামীর সাথে সম্পর্ক তেমন যাচ্ছিলনা। এতদিন তার বড়বোন আর্থিক সহায়তা করলেও এখন বোনরা তেমন ভাবে পারেনা৷ ইসমাইল ছেলে ও স্ত্রী কাউকে ভরণপোষণ দেননা। সিদ্দিককে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ইসমাইল আর যোগাযোগ রাখেনি। আরও হুমকিধামকি দেয়, ডাক্তার বলছে সিদ্দিক বাঁচবে না, বাড়িতে চলে আসো।

তিনি আরও বলেন, সিদ্দিক আমার বেঁচে থাকার শেষ ভরসা। আজকে সিদ্দিককে ঢাকা নিয়ে গেছি। সমাজের উচ্চবিত্তদের সহযোগিতায় হয়তো সিদ্দিককে বাঁচানো সম্ভব। সিদ্দিককে বাঁচানোর জন্য সহযোগীতা চেয়েছেন।

হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট ডা. আখতার হোসেন বলেন, শিশুটি নিউমোনিয়া ও পিএনএ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসার মাধ্যমে নিউমোনিয়া থেকে মুক্তি মিললেও পিএনএ রোগের জন্য আজীবন ফিজিওথেরাপির দরকার হয়। শিশুটিকে ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করা হলে, হয়তো কিছু উন্নতি হবে।

তিনি বলেন, পিএনএ রোগের কারণে শিশুটির বিভিন্ন অঙ্গে জড়তা রয়েছে, হাত-পায়ের সন্ধিস্থলগুলো শক্ত। এর কারণে সে ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে না। ঘাড় থেকে সমস্যা উৎপত্তি হওয়ায় হয়তো ভবিষ্যতে সেটিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না শিশুটি। ঘাড় সবসময় নিচের দিকে হেলে থাকবে।

তবে, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে হয়তো এ অবস্থার উন্নতি সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply