অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং দেশে নতুন ধরন ওমিক্রনে অক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যেতে পারবেন। যাঁরা টিকা নেননি, নানা ক্ষেত্রে তাঁদের পড়তে হবে বিপত্তিতে। যেমন—রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে সঙ্গে নিতে হবে টিকার সনদ। না হলে রেস্টুরেন্টে খাওয়া যাবে না। আর টিকা নেননি এমন ব্যক্তিকে রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং দেশে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে আন্ত মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানান। বৈঠকে সব মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওমিক্রন কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এসব বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বৈঠকে ওমিক্রন রোধে সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার সময় আমরা বলেছি, আমাদের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে। অক্সিজেন আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০ ফুট স্থাপন করা আছে। টিকা কার্যক্রম চলমান। ২০ হাজার বেড রেখে দিয়েছি। এখন ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত। তাঁরা জানেন, কিভাবে করোনার চিকিৎসা করতে হয়। দেশবাসীও বিষয়টি জানেন। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, করোনা বাড়ছে। মৃত্যুহার যদিও এখনো কম আছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারও সেই লকডাউনের কথা চলে আসবে। আবারও স্কুল-কলেজ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যেটা আমরা চাই না। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের ল্যান্ডপোর্ট, সি-পোর্ট, এয়ারপোর্টে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা অলরেডি বাড়ানো হয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্ট আমরা করছি। পিপিআর টেস্টও করছি। কোয়ারেন্টিনের আরো বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোয় যাতে অংশগ্রহণের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়, এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’
পরিবহন সেক্টরে বলা হয়েছে, যে সিট ক্যাপাসিটি আছে তা কমিয়ে চালাতে। আশা করি, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। আর সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে। দোকানপাট, বাস, ট্রেন, মসজিদ, অর্থাৎ সব জায়গায় মাস্ক পরতে হবে। না পরলে জরিমানা করা হবে। এ বিষয়টি দেখবে মোবাইল কোর্ট।
আরেকটি বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে সবাই টিকা গ্রহণ করে। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁরা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন, অফিসে যেতে পারবেন। স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন কাজকর্ম করতে পারবেন। আর যদি টিকা না নিয়ে থাকেন, তাহলে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে পারবেন না। কারণ রেস্টুরেন্টে খেতে হলে করোনার সনদ দেখাতে হবে যে আমি টিকা নিয়েছি। আর সনদ না দেখে কোনো রেস্টুরেন্ট যদি কাউকে খাবার পরিবেশন করে, তবে ওই রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হবে। এর জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী আরো বলেন, ‘লকডাউনের সুপারিশ আমরা এখনো করিনি। লকডাউনের পরিস্থিতি এখনো হয়নি। লকডাউনে যাতে যেতে না হয়, সে জন্যই এসব প্রস্তুতি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকবে। টিকাটা যেন তারা গ্রহণ করে। আমরা জানি, টিকা নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব আছে। আমরা চাচ্ছি টিকাদান জোরদার করা হোক। আহ্বান করছি, ছাত্র-ছাত্রীদের যেন তাড়াতাড়ি টিকা দেওয়া হয়।’
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, তথ্যসচিব মো. মকবুল হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।