অনলাইন ডেস্ক:
দুই বছর আগে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া ভিসাতেই গত বৃহস্পতিবার রাতে কানাডা গেছেন ডা. মুরাদ হাসান। নারীর প্রতি অবমাননাকর ও অশালীন বক্তব্য দিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কানাডায় একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মুরাদ হাসান। সে সময় তিনি কানাডার ভিসা নেন। সরকারিভাবেই তাঁর সফর চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সফরে যাওয়ার আগেই তাঁর দপ্তর বদল হয়ে যায়। তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর পরও তিনি কানাডায় স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ‘মাল্টিপল এন্ট্রি’ ভিসা দেওয়া হয়। এটা সাধারণত পাঁচ বছরের জন্য হয়ে থাকে। প্রতিমন্ত্রী মুরাদও দীর্ঘমেয়াদি ভিসা পেয়েছিলেন। ৭ ডিসেম্বর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর তিনি কানাডায় নতুন করে কোনো ভিসার আবেদন করেননি। ফলে আগে যে ভিসা তাঁর পাসপোর্টে আছে তা ব্যবহার করেই তিনি কানাডায় গেছেন। তাঁর ‘কূটনৈতিক পাসপোর্টে’ এ ভিসা দেওয়া আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি এখনো সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য হিসেবেও তিনি ‘কূটনৈতিক পাসপোর্ট’ প্রাপ্য।
ট্রান্সমিটার ও রক্ষণাবেক্ষণ দেখতে কানাডায় : গত সেপ্টেম্বরে মুরাদ হাসান আবার কানাডা সফর করেন। সফরের উদ্দেশ্য ছিল ট্রান্সমিটার ও রক্ষণাবেক্ষণ দেখা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানসহ চারজনকে ১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর কানাডা সফরের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কানাডার রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিজিটাল টেরেস্ট্রিয়াল ট্রান্সমিটার অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স প্রগ্রামে’ যোগ দেন মুরাদ হাসান। প্রগ্রামের আয়োজক কানাডার রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয় হলেও প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর সফরের খরচ মেটানো হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে। মুরাদ হাসানের সফরসঙ্গীর তালিকায় নাম ছিল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপপরিচালক ও ঢাকার বেসরকারি টিভি চ্যানেলের একজন সাংবাদিকের। তবে সফরের খরচ তাঁরা নিজেরাই দেবেন বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। প্রজ্ঞাপনে কানাডা ছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস উইংয়ের কার্যক্রম দেখতে ২৫ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের যুক্তরাষ্ট্র সফরেরও অনুমতি দেওয়া হয়।
এবারও কেন কানাডায়? মুরাদ হাসান এবারও কেন কানাডা গেছেন এবং সেখানে কী করবেন, কত দিন থাকবেন সে বিষয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একইভাবে প্রশ্ন আছে সমালোচনার মধ্যে তাঁর দেশ ছাড়া নিয়েও।
মুরাদ হাসানের দেশ ছাড়ার প্রাক্কালে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মুরাদ হাসান বিদেশে যাবেন কি যাবেন না সেটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।
মুরাদের সহযোগীদের এলাকায় দেখা যাচ্ছে না : মুরাদ হাসানের নির্বাচনী এলাকা সরিষাবাড়ীতে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা গাঢাকা দিতে শুরু করেছেন। দুই দিন ধরে অনেককেই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে এলাকার হাট ও বালু মহালের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন তাঁর অনুসারীরা।
গতকাল ছিল সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়নের পিংনা-গোপালগঞ্জ গরুর হাট বসার দিন। এত দিন ধরে এই হাট নিয়ন্ত্রণ করছিলেন মুরাদের অনুসারী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। গতকাল তাঁরা হাটে আসেননি। পিংনা হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এত দিন হাট নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন একটু দূরে থাকছি। ওদিকে গেলে আমাদের নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে।’
সরিষাবাড়ী পৌর যুবলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াত আলম মুকুল পরিচিত ছিলেন মুরাদ হাসানের ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে। তিনি যমুনা নদী ও ঝিনাই নদ থেকে বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করতেন। মুরাদের পদত্যাগের পর তাঁকে আর সরিষাবাড়ীতে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আমি বাইরে আছি।’
স্থানীয় রাজনীতিতে মুরাদ হাসানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত আব্দুর রশীদ। তিনি আজ শনিবার ঢাকা থেকে সরিষাবাড়ীতে যাচ্ছেন। এ উপলক্ষে তাঁর অনুসারীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বড় ধরনের লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।