অনলাইন ডেস্ক:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসাসহ একাধিক ইস্যুতে রাজপথ অস্থির হয়ে ওঠার আশঙ্কা করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। তাঁরা রাজপথে সরকারবিরোধী যেকোনো নৈরাজ্য মোকাবেলায় সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় একাধিক নেতা চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক অজনপ্রিয় ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ জানান। সভায় বাসভাড়া অর্ধেক করতে শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক বলে মত দেন কয়েকজন।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে যেকোনো আন্দোলন কর্মসূচি মোকাবেলায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ নভেম্বর সোমবার ঢাকা মহানগরের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ইস্যুটিকে বিএনপি রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে মন্তব্য করেন একাধিক নেতা। তাঁরা বলেন, বিএনপি আন্দোলনের জন্য একটি ইস্যু চাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ায় প্রাধান্য দিলে বিএনপি আইনি পথে হাঁটত, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইত। তারা যেহেতু আন্দোলনের পথে হাঁটছে, আওয়ামী লীগকেও তাই সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য দেন একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ আরো কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, অনেক অজনপ্রিয় প্রার্থীকে আমরা মনোনয়ন দিচ্ছি। ওই সব প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গিয়ে দলকে নানা বদনামের ভাগীদার হতে হচ্ছে আর তৃণমূলে আমাদের সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সভায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়েও কথা হয়। বাস মালিকদের প্রতি অর্ধেক ভাড়া আদায়ের আহবান জানানোর সিদ্ধান্ত হয় সভায়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, অসীম কুমার উকিল, শাম্মী আহমেদ, বিপ্লব বড়ুয়া, দেলোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম, সায়েম খান প্রমুখ।
সভার সূচনা বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর উদারতায় দেশের প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক নিয়ম-নীতির মধ্যে যতটুকু সম্ভব খালেদা জিয়াকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে বলেন, কারো চিকিৎসার নামে জনগণকে জিম্মি করা যাবে না। কোনো ইস্যু সৃষ্টি করে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করবে।
সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে প্রতিহত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সারা দেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান ও সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। যারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে, তাদের সমুচিত জবাব দেব।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মানবিক হৃদয়ের কল্যাণে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও খালেদা জিয়া বাসায় থাকছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ পাচ্ছেন। হতে পারে, খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আইনের চোখে তাঁর বর্তমান পরিচয় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বলেছেন, বেগম জিয়াকে নাকি স্লো পয়জনিং করা হচ্ছে। তাঁর (খালেদা) পাশে থাকেন আপনারা। তাঁকে যে খাওয়ায় সে পরিবারেরই লোক। তাঁর আশপাশে সর্বক্ষণ ঘোরাফেরা করে বিএনপির লোকেরা। আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারের কেউ তাঁর পাশে থাকে না। তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের চিকিৎসকরাই চিকিৎসা দিচ্ছেন। স্লো পয়জনিং যদি করে থাকে, তাহলে তাঁর আশপাশের লোকেরাই করতে পারে।’