Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
রডের বাজার লাগামহীন, দামে সর্বোচ্চ রেকর্ড

রডের বাজার লাগামহীন, দামে সর্বোচ্চ রেকর্ড

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে রডের দাম। এতে দেশের রডের দামের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে জরুরি এই নির্মাণসামগ্রীর দাম।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন ভালো মানের ৭২.৫ গ্রেডের ( ৫০০ডব্লিউ) এক টন রডের দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকা। এর আগে দেশে রডের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ওয়ান/ইলেভেনের (২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর) সময়। সে সময় দেশজুড়ে দেখা দেওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে এক টন রড বিক্রি হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা রডের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল, স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে। এর সাথে বেড়েছে তেল ও গ্যাসের দাম। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। সব মিলিয়ে রডের কাঁচামাল আমদানি করে আনতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। মূলত এ কারণেই রডের দাম বেড়েছে। তা ছাড়া মহামারীর কারণে নির্মাণকাজে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছিল। তবে এখন নির্মাণকাজ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বেড়েছে রডের চাহিদা। একদিকে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়তি চাহিদাও রডের দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন (১৬ নভেম্বর) ভালো মানের বা ৭২.৫ গ্রেডের এক টন রড কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭৭ থেকে ৮১ হাজার টাকা। তাছাড়া মিলপ্রাইস (ল্যান্ডিং সহ) বিএসআরএম ৮০১৬০টাকা, একেএস ৭৯৮৫০ টাকা, কেএসআরএম ৭৯৮৫০ টাকা, এসএআরএম ৭৭৫০০ টাকা, এসসিআরএম ৭৮০০০ টাকা,এইচ এম স্টিল৭৭৫০০ টাকা, গোল্ডেন ৭৮০০০ টাকা, জিপিএইচ ৭৯৩০০ টাকা, আনোয়ার ৭৯০০০ টাকা, মেট্রোসেম ৮০০০০, মেগনাম ৭৮৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেই টনপ্রতি রডের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত রডের দাম ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বাড়ে। এবার কয়েক মাসে আগ থেকেই দাম বাড়া শুরু হয়েছে। এখন যে হারে রডের দাম বাড়ছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে এক টন রডের দাম ৯০ হাজার টাকা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এখন ৬০ গ্রেডের রড ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খুচরা পর্যায়ে ৬০ গ্রেডের রড ৭৮ হাজার ৫০০ থেকে ৮০ হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা এক বছর আগে ছিল ৭৩ হাজার থেকে ৭৫ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।

সীমা অটো ষ্টীল মিলস লিঃ এর পরিচালক পারভেজ উদ্দিন, গণমাধ্যমকে বলেন, রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। শুল্ক করও বেড়েছে। আবার রডের কেমিক্যাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এই কেমিক্যালের দামও বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়েই এখন রডের দাম বেশি।

এর আগে দেশের বাজারে রড এত বেশি দামে বিক্রি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এর আগে কখনো এত দামে রড বিক্রি হতে দেখিনি। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে রডের দাম আরও বাড়তে পারে।

বিএসআরএম এর কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর বলেন, আজ (১৪ নভেম্বর) আমাদের রডের দাম ৮০ হাজার টাকায় উঠেছে। এটাই ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এর আগে কখনো রডের এত দাম হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে রডের দামও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এখন স্ক্র্যাপ প্রায় ২০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সামনে রডের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়লে সামনে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। স্ক্র্যাপের দাম কমলে রডের দাম ধপ করে পড়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করছে। তবে স্ক্র্যাপের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের নির্মাণ খাত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করে থাকে। নির্মাণ শিল্পের মূল উপাদান এমএস রডসহ এ খাতের প্রায় সব প্রকার দ্রব্যাদির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে অনবরত বাড়ছে। শ্রেণিভেদে দ্রব্যের এ মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ। এছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক মজুরিও প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের ব্যয়ও সে অনুপাতে বাড়বে। এমতাবস্থায় চলমান অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ সম্ভব না হলে প্রকল্পের সব নির্মাণকাজে স্থবিরতা দেখা দেবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply