অনলাইন ডেস্ক:
প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বৈঠকে এ আলোচনা হয়। গভীর রাতে প্যারিস থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে। এ বিষয়ে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে প্যারিসে পৌঁছেন। দীর্ঘ ২২ বছর পর বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্সে এটিই দ্বিপক্ষীয় সফর। এই সফরের প্রথম দিনে আলোচনা হয়েছে ভূরাজনীতি ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ইস্যুতে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর দপ্তর জানায়, সবার জন্য সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে উন্মুক্ত, অবাধ, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিষয়ে ফ্রান্স ও বাংলাদেশের লক্ষ্য অভিন্ন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সফরের শুরুতেই এলিসি প্রাসাদে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে পৌঁছলে প্রেসিডেনশিয়াল গার্ড প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানায়। পরে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। এরপর দুই নেতা বৈঠকে বসেন। এর আগে তাঁরা দুইবার ফটো সেশনে অংশ নেন। সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেওয়ার পর তাঁরা মধ্যাহ্নভোজ এবং একান্ত আলোচনায় অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। পরে রিপাবলিকান গার্ড বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
সন্ধ্যায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাস্তেক্সের সরকারি বাসভবন ম্যাটিগননে যান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম গত রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা দেওয়ার অনুষ্ঠানের ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘অত্যন্ত ব্যস্ত একটা সফরের সূচনা। সফরের চারটি অংশ। দ্বিপক্ষীয়, প্যারিস পিস ফোরাম, ইউনেসকো এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক।’
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজ বুধবার প্যারিসে এয়ারবাসের সিইও গুইলাম ফৌরি, ড্যাসল্ট এভিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এরিক ট্র্যাপিয়ার এবং থ্যালেসের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস কেইন সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ফরাসি ব্যাবসায়িক সংস্থা এমইডিইএফের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ফ্রান্সের মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন। স্থানীয় সময় আজ বিকেলে তিনি ফরাসি সিনেট পরিদর্শন করবেন। সেখানে চলমান সিনেট অধিবেশনে তাঁকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্যারিস পিস ফোরামে যোগ দেবেন। পরে তিনি ইউনেসকো সদর দপ্তরে ‘ইউনেসকো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। শেখ হাসিনা আগামী শুক্রবার প্যারিস পিস ফোরামে যাবেন এবং সাউথ-সাউথ ও ত্রিদেশীয় সহযোগিতার ওপর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। পরে তিনি ইউনেসকোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিতে ইউনেসকো সদর দপ্তরে যাবেন এবং সেখানে তিনি তাঁর ভাষণ দেবেন।
তিনি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মানে ইউনেসকোর মহাপরিচালক অদ্রে আজোলে আয়োজিত নৈশ ভোজে অংশ নেবেন।
শেখ হাসিনা আগামী শনিবার প্যারিসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। সেদিন রাতে তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে শার্লস দ্য গল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন এবং পরদিন রবিবার সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬-এ ওয়ার্ল্ড লিডারস সামিট ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে গ্লাসগো থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছান।
গত ৩১ অক্টোবর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফরে স্কটল্যান্ডের বন্দরনগরী গ্লাসগো পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।