|
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদত করার জন্য। পৃথিবীতে ইবাদত করলে তার নেকি মিলবে পরকালে; যে নেকির বিনিময়ে পরকালে চির সুখের জীবন কাটাবে বান্দা। ইবাদত করা বা নেকি অর্জন শুধু দুনিয়ায় জীবিত থাকা অবস্থাতেই করা যায়। মৃত্যুর পর নেকি অর্জনের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে, এমন কিছু আমল রয়েছেÑ দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় বান্দা যদি এগুলো করে যান, তাহলে কবরে বসেও এর নেকি অর্জন করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি জিনিস বাকি থাকেÑ ১. সদকায়ে জারিয়া ২. উপকারী ইলম ৩. নেক সন্তান, যে তার পিতা-মাতার জন্য দোয়া করবে। (মুসলিম : ৪৩৫, ৪৩১০) মসজিদ নির্মাণ করা : কোনো ব্যক্তি যদি মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করে যায় তাহলে এই মসজিদে যতদিন মানুষ ইবাদত বন্দিগী করবে ততদিন এর সওয়াব (কবরে বসেও) পেতে থাকবে। শুধু মসজিদ নির্মাণ নয়, মসজিদের অন্যান্য কাজেও যেমন ফ্যান দেওয়া, লাইট ব্যবস্থা করা কিংবা মসজিদের এসি ইত্যাদি ব্যবস্থা করে দিলেও এ সওয়াব পেতে থাকবে। মসজিদে দানের বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’ (মুসলিম : ১২১৮) অভাবগ্রস্তদের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণ: রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিন মৃত্যুবরণ করার পর তার সঙ্গে যে আমলের সওয়াব সম্পৃক্ত থাকবে, তা হলো ইলম শিক্ষা দেওয়া ও কিতাব রচনা করা, নেক সন্তান রেখে যাওয়া, মসজিদ নির্মাণ করা, অভাবগ্রস্তদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া, পানি প্রবাহিত হওয়ার ব্যবস্থা করা এবং তার সম্পদ থেকে সদকা করা।’ (ইবনে খুজাইমা : ২৪৯) ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেওয়াসদকায়ে জারিয়ার মতো কেউ যদি ধর্মীয় উপকারী জ্ঞান কাউকে শিক্ষা দেয়Ñ এই জ্ঞান যতদিন দুনিয়ায় অব্যাহত থাকবে অর্থাৎ তার ছাত্র তার ছাত্রকে শিক্ষা দেবে, দ্বিতীয় জনের ছাত্র আবার অন্যজনকে শিক্ষা দেবে, অন্যজন আবার আরেকজনকে শিক্ষা দেবে। এভাবে যতদিন এ জ্ঞান দুনিয়াতে অব্যাহত থাকবে ততদিন এই আমলের নেকি বান্দা কবরে বসেও পেতে থাকবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মানুষকে ইলম শিক্ষা দিল, এ ইলম অনুযায়ী আমলকারীর সমপরিমাণ নেকি তার আমলনামায়ও যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের কারও সওয়াবে কোনো কমতি হবে না।’ (ইবনে মাজা : ২৪০)। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি : ৫০২৭) সৎ সন্তান রেখে যাওয়াসদকায়ে জারিয়া ও উপকারী ইলমের মতো আরও একটি আমল হলো সৎ সন্তান রেখে যাওয়া। যে সন্তান মা-বাবার জন্য দোয়া করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এই সন্তান (সন্তানের সন্তান, তার সন্তান কিংবা তারও সন্তান…) যদি আল্লাহর দরবারে মা-বাবা কিংবা পূর্বসূরিদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেনÑ তাহলে আল্লাহ ওই মৃত ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব লিখতে থাকেন। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪টি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকেÑ ১. মুসলমানদের ভূখণ্ডের সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সওয়াব; ২. ভালো কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরণ করল, তাদের সওয়াব; ৩. এমন সদকা, যা চলমান থাকে তার সওয়াব; ৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়াÑ যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসনাদ আহমাদ: ২২২৪৭)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘নেক সন্তানের দ্বারা আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (পরকালে) বান্দা বলবে, হে আল্লাহ এটা কীভাবে হলো? আল্লাহ বলবেন, তোমার মৃত্যুর পর তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে দোয়া করেছিল।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৬৬০) |
মৃত্যুর পরেও যে কাজের নেকি অব্যাহত থাকবে
মুফতি আমিন ইকবাল
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১,