অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে সবার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। আমাদের সংবিধানেও সে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের ধর্মেও সেই নির্দেশনা আছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি কোরো না। ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি যেন না করে, সেটাই আমরা চাই। এ দেশে সব ধর্মের মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
আওয়ামী লীগ প্রধান গতকাল বিকেলে দলের এক আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আলোচনাসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। আলোচনাসভার মূল স্লোগান ছিল ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োচ্ছ্বাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে, ভালোভাবে বাঁচবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, একটা শিশু তার যে মেধা, তার যে জ্ঞান, তার যে বুদ্ধি, সেটা যেন বিকশিত হতে পারে, যেন বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেই চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি। কারণ এত রক্তক্ষয়, এত কিছু বাংলাদেশে ঘটে গেছে, আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে এ দেশে মানবাধিকার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে সেনাবাহিনীতে হত্যাকাণ্ডসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। তবে তাঁর ১৬ মিনিটের বক্তব্যের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল তাঁর ছোটো ভাই শেখ রাসেলকে নিয়ে স্মৃতিচারণা।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ হত্যার কোনো বিচার হবে না বলে আইন হয় বাংলাদেশে। …যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, আমাকে অনেক সময় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করে। তখন আমার মনে হয়, আমি জিজ্ঞাসা করি, তাদের কি অধিকার আছে আমাকে প্রশ্ন করার? যেখানে আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের হত্যা করার পর আমি বিচার চাইতে পারিনি। আমি যখন বাংলাদেশে আসলাম, আমি কোনো মামলা করতে পারব না। আমি কোনো বিচার চাইতে পারব না। কারণ ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স। খুনিদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের দূতাবাসে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, জনগণের ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের সদস্য করা হয়েছে, নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে এই দেশে। কী অবস্থা ছিল তখন দেশের?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির অনেকে দাবি করে, জিয়াউর রহমানের হাতে সেনাবাহিনী খুব ডিসিপ্লিনড ছিল এবং শক্তিশালী হয়েছে। সেখানে আমার প্রশ্ন, ১৯টি ক্যু যখন হয় একটি দেশে, অর্থাৎ ১৯৭৫-৮১ এই সময়ে ১৯টি ক্যু হয়েছিল। তাহলে সেই দেশে সেনাবাহিনী ডিসিপ্লিনড থাকে এই দাবি করে কোন মুখে? এ কথা বলেই বা কোন মুখে? জিয়াউর রহমান একটি সেনাবাহিনীর সদস্য হয়েও শুধু জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত তা-ই নয়, সে হাজার হাজার সৈনিক, অফিসারদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনীর অফিসারদের হত্যা করেছে।’
শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ও বারবার আব্বার কাছে যেত। ওর ভেতরে একটা হারাই হারাই ভাব ছিল। সে জন্য বারবার ছুটে যেত। আব্বা যতবারই বলতেন, খেলতে যাও বা পড়তে যাও, ও যেতে চাইত না। কিছুতেই আব্বাকে ছাড়তে চাইত না। যেদিন কারাগারে যেতাম আব্বার সাথে দেখা করতে, সেদিন ছিল তার জন্য সবচেয়ে কষ্টের।’ ‘রাসেলকে সবশেষে হত্যা করা হয়। বলা হয়েছিল ছোটটাও যেন বাঁচে না। এই নির্দেশ কে দিয়েছিল? সবচেয়ে কষ্টের হলো, সবশেষে রাসেলকে…এদিকে চাচার লাশ, ওদিকে কামালের লাশ, আব্বার লাশ, মায়ের লাশ সব মাড়িয়ে ওপরে নিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করল। অথচ রাসেল ছোটবেলা থেকে এত সহজ-সরল একটি শিশু! তার কোনো দাবি ছিল না। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল সে সেনা অফিসার হবে।’