উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শেখ হাসিনা। একজন সংগ্রামী রাজনৈতিক নেত্রী, একজন সাহসী যোদ্ধা, বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তির আলোকবর্তিকা, একজন মমতাময়ী মানবিক নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গর্বিত সন্তান। বঞ্চিত বাঙালির একমাত্র আশ্রয়স্থল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতাকাবাহী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সর্বজনমান্য নেত্রীর আজ। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবনের ৭৪ টি ঝড়ো বসন্ত পেরিয়ে আজ ৭৫ এ পা দিলেন তিনি।
ছাত্র জীবন হতে পিতার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনীতিকে ছায়ার মতো অনুসরন করেই রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্টীর স্বৈরশাসনে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছিলো। মায়ের সংগে জেলখানায় পিতাকে দেখতে যেতে যেতে এক কঠিন সংগ্রামী ও দৃঢ়চেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
১৯৭৫-এ কলংকজনক আগষ্ট হত্যাকান্ডের সময় ঘটনাক্রমে দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ১৫ আগস্টের অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়েও দুঃসহ যন্ত্রণা ও কষ্ট নিয়ে গত চারটি দশক তাঁকে ‘জীবন জয়ের’ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়েছে। ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সামরিক শাসক জিয়া ক্ষমতা দখল করে ইনডেমনিটি আইন করে বঙ্গববন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ বন্ধ করার পাশাপাশি খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিদের উপর দমন পীড়ন, জেল জুলুম, হত্যা করার পাশাপাশি দলকে ভেংগে খন্ড -বিখন্ড করেছিলো। স্বাধীনতা বিরোধি রাজাকারদের নিয়ে সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে পদদলিত করে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশ পরিচালনা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিলো।
দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দলের দায়িত্বভার গ্রহণের পরই তাঁর ৪১ বছরের ক্লান্তিহীন পথযাত্রা। এই যাত্রাপথ কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। গত ৪১ বছরে কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বাঁচলেও স্বৈরাচারী শাসকদের জেল-জুলুম-অত্যাচারের হাত থেকে তিনি রক্ষা পাননি। এরশাদের স্বৈরশাসনের আমল থেকে শুরু করে সর্বশেষ ১/১১ সরকারের আমলে বেশ কয়েকবার তাঁকে কারাবরণ এবং দীর্ঘ কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়। মোকাবিলা করতে হয় অসংখ্য মিথ্যা মামলা ও হয়রানির।
কিন্তু কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। অশুভ শক্তির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করেই তিনি লক্ষ্যের দিকে অবিচল পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই এরশাদ স্বৈরাচারের পতন হয়েছিলো। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবিমৃশ্যকারী কান্ডকারখানা থেকে তিনি বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করেন।
এই সময়ের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বঙ্গববন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে জাতিকে কলংকমুক্ত করার পাশাপাশি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু করে আইনের শাসন বন্ধ করেছিলেন তা থেকে জাতিকে মুক্ত করেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৩০ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষের বেশি মা -বোনের সম্ভ্রমহানির সংগে যারা জড়িত সেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার পথ সুগম করেছেন ।
দলীয় প্রধান হিসাবে এই দীর্ঘ সময় চলার পথে অনেক চড়াই- উৎরাই , ঘাত -প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের এই অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর সফল নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই শাসন আমলেই দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। তিনি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণীপেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করেছেন । ‘রূপকল্প ২০২১’ এর মাধ্যমে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর বাস্তবায়ণের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ প্রতিজ্ঞ ।
কেবল রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেই তিনি অনন্য নন, তাঁর রয়েছে অসাধারণ মানবিক গুণাবলি। লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি স্নেহময়ী ভগ্নী-জায়া-জননী। বিলাস-বাহুল্যবর্জিত সাধাসিধে জীবনযাত্রা এবং পোশাকেআশাকে তাঁর অতুলনীয় বাঙালিয়ানা তাঁকে মাটির মানুষের, দুঃখী মানুষের প্রিয় নেতা হিসেবে অসামান্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে বসিয়েছে।
বর্ণাঢ্য সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তাঁর ধীশক্তি এবং সৃজনশীল লেখালেখি তাঁকে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও অনন্য আসনে বসিয়েছে। রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা যেমন, তেমনি লেখক-চিন্তক শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজের জন্য শিখরস্পর্শী অক্ষয় আসন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতি অধ্যায়ে, প্রতি পাতায় ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্ব উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ তার অবস্থানকে আরো সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং এর নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্ব পরিমন্ডলে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। একটি পশ্চাৎপদ দেশকে উন্নয়নের কাতারে শামিল করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের মাঝে নিজের অবস্থানকে একটা অনন্য ধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন জোটে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তি অবশ্যই আর্থ-সামাজিক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, যা অভ্যন্তরীণ অবস্থার উল্লেখযোগ্য উৎকর্ষের ফল। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্য পূর্ণ। বাংলাদেশ ও তার নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার গুরুত্ব বেড়ে যায়