উখিয়া, কক্সবাজার,প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ।গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর পরিচালিত সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে গুলি করে বন্দুকধারীরা।মহিব উল্লাহ নিহতের জের ধরে ক্যাম্পে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ক্যাম্প অভ্যন্তরে দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন টহল জোরদার করেছে।রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহবান জানিয়ে প্রতিটি জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে।নতুন আগুন্তকঃ মানুষ দেখলে জেরার কবলে নিয়ে যাচ্ছে। বিকাল ৪ টায় লম্বাশিয়া ক্যাম্পে মুহিব উল্লাহর জানাযার নামায সম্পন্ন হয়।এতে কয়েক সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অংশ নেয়।
মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, উখিয়া কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এশার নামাজ শেষ করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর অফিসে অবস্থানকালে একটি বন্দুকধারী দল আমার ভাইয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।ওই অফিসে কর্মরত অন্যান্যদের মারধর করে ছেড়ে দিলেও ভাইয়ের বুকে গুলি চালায় মাস্টার আবদুর রহিম নামে এক সন্ত্রাসী। বন্দুকধারীদের এ দলে মাস্টার আব্দুর রহিম, মুর্শিদ, লালুসহ ২০ থেকে ২৫ জন ছিল। রোহিঙ্গাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমার ভাই এগিয়ে আসতেন। তাদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছিলেন।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘাতকদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বুধবার রাত ৮টার দিকে কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে গুলি করে হত্যা করা হয় এই আলোচিত রোহিঙ্গা নেতাকে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুহিবুল্লাহর লাশ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে আনার পর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। লাশ এখনো মর্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।
মহিব উল্লাহ এআরএসপিএইচ’র চেয়ারম্যান ছিলেন। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ২০১৯ সালে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক(এসপি) নাঈমুল হক জানান, এশার নামাজের পর রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে রোহিঙ্গা শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ সুপার নাঈমুল হক জানান, সন্ত্রাসীরা মহিব উল্লাহকে লক্ষ্য করে ৫ রাউন্ড গুলি করে। এর মধ্যে তিনটি গুলি তাঁর দেহে বিদ্ধ হলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর মরদেহ উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে আকস্মিক এই হত্যাকাণ্ডের পর শিবিরগুলোতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেক রোহিঙ্গা কান্নায় ভেঙে পড়ে। জানা গেছে, কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে চায়। নিহত রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবিদাওয়া নিয়েই লড়ে আসছিলেন।হত্যাকাণ্ডের পরপরই সাধারণ রোহিঙ্গারা প্রকাশ্যে বলছে, দীর্ঘদিন ধরে শিবিরগুলোতে দাপট দেখানো সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠীই মহিব উল্লাহকে হত্যা করে থাকতে পারে। ওই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো মিয়ানমারে ফিরতে চায় না। বরং যারা মিয়ানমারে ফেরার পক্ষে কথা বলে, তাদের ওপর হামলা চালায়। মহিব উল্লাহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করে আসছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী মহিব উল্লাহকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। কিন্তু দমাতে না পেরে তাঁকে চিরতরে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক(এসপি) নাইমুল হক বলেন,মুহিব উল্লাহ নিহতের জেরে যেকোন ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে টহল অব্যাহত রয়েছে।ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের বার্ষিকীতে মহিব উল্লাহ বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে