কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
এমবিবিএস ডাক্তারী পাস করে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দূর্বাচারা গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে তুষার (৩৩) ।
বর্তমানে ডজন খানেক ভুয়া পদবী ব্যবহার করে কুষ্টিয়ার বড় বড় স্বনামধন্য চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে আসছে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তুষার বলে অভিযোগ উঠেছে।
সুত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তুষার। তারপর ২০০৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ডাক্তারী লেখাপড়া শুরু করেন। ডাক্তারি লেখাপড়া শেষ করে ২০১৪ সালে তিনি ঢাকা এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে সার্টিফিকেট লাভ করেন। এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে সার্টিফিকেট লাভ করার পর ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তার নিজ বাড়িতে একটি চেম্বার খুলে বসেন যা এখনো রয়েছে।
শুধু এমবিবিএস পাশ করার কারনে বিভিন্ন বিষয়ের রোগী দেখতে না পারলেও বর্তমানে আব্দুল্লাহ আল মামুন চিকিৎসা সেবার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে ভুয়া পদবী। যার কোন (বৈধ) সার্টিফিকেট, প্রশিক্ষন এবং দক্ষতা কোনটাই তার মধ্যে নেই।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তুষার নেম প্লেট এবং প্রেসক্রিপশনে বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ ও পদবী রয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে তিনি ঢাকা বারডেম হাসপাতাল থেকে সিসিডি,ইডিসি, ইউকে (ইংল্যান্ড) হাসপাতাল থেকে ডিপ্লোমা ইন রেসপিরেটোরী মেডিসিন, ভারতের হায়দ্রাবাদে অবস্থিত অ্যাপলো হাসপাতাল থেকে ফেলোশিপ এন্ড মাষ্টার্স ক্লাস কোর্স ইন ইন্টারনাল মেডিসিন, এবং ইউকে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পেয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে খোজ নিয়ে জানা যায়, ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন কখনো ডাক্তারী লেখাপড়ার জন্য দেশের বাইরে যায়নি। শুধু মাত্র ৭ দিনের জন্য থাইল্যান্ডে ভ্রমনে গিয়েছিলো।
এ নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝেও নানা ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কারন দেশের বাইরে না গিয়ে হঠাৎ করে এতগুলো পদবী এবং বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ আল মামুন কিভাবে হয়েছেন।
একাধিক সুত্রে জানা যায়, ভুয়া পদবী ব্যবহার করে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের লাহিনী বটতলায় অবস্থিত ফেরা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের নিচ তলা,ভেড়ামাড়া উপজেলার সনো ডায়গনষ্টিক সেন্টার লিঃ ইউনিট-২, মিরপুর উপজেলার বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন এনামুল ফার্মেসী,সদর উপজেলার দূর্বাচারা বাজারে অবস্থিত রেহানা -জব্বার মেডিকেল সেন্টার,পান্টি পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার,সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মা ও শিশু, বাত-ব্যথা, এ্যাজমা/হাঁপানী, এ্যালার্জি, মানসিক রােগ, কার্ডিওলজি, চর্ম, যৌন রােগ, নাক, কান, গলা, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, হার্টের রােগী, কিডনী রােগী, হাঁপানী রোগী সহ সর্ব রোগের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। যারফলে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তুষারের কাছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারন রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল আইনে রয়েছে কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবী, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেনা যার ফলে তার কোন অতিরিক্ত পেশাগত যােগ্যতা আছে মর্মে কেহ মনে করতে পারে, যদি না সেটি কোন স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসা শিক্ষা যােগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা-শিক্ষা যােগ্যতা হয়ে থাকে। নুন্যতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রী প্রাপ্তগণ ব্যতিত অন্য কেহ ডাক্তার পদবী ব্যবহার করিতে পারবে না।আর কেই যদি এই অপরাধ করে থাকে তাহলে তাকে ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড বা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় করা হবে।
এসব নিয়ম থাকা সত্তেও ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তুষার ভুয়া পদবী ব্যবহার করে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, একজন এমবিবিএস ডাক্তার কিভাবে এতগুলো রোগের বিশেষজ্ঞ হয়ে চিকিৎসা করে আমার জানা নেই। কাগজ পাতি হাতে পেলে আমি খতিয়ে দেখবো।
এ ব্যাপারে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তুষারের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমবিবিএস পাশ করে সব রোগের চিকিৎসা করা যায়। এ ছাড়া আমি এখনো ট্রেনিং করে যাচ্ছি। বিদেশী ইংল্যান্ড ও ভারতের প্রশিক্ষন এখন দেশেই হয়। আমার অনলাইন ট্রেনিংয়ের কাগজ রয়েছে। শুধু আমি একা নয় কুষ্টিয়া বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ডাক্তারদেরও একই অবস্থা।