অনলাইন ডেস্ক:
দ্রুতই স্কুল-কলেজ যাতে খুলে দেওয়া যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। সে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের টিকা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের সঙ্গে স্কুলে কর্মরত যাঁরা, তাঁদের পরিবারসহ যাতে টিকা দেওয়া হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে ওই শোক প্রস্তাব আনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কতগুলো নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা মেনেই স্কুলের ছেলে-মেয়েদেরও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। যার জন্য কিছু ফাইজারের টিকা এরই মধ্যে এসে পৌঁছেছে, আরো পৌঁছাবে। মডার্নার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। তা ছাড়া অন্যান্য টিকাও আসছে। এরই মধ্যে টাকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছয় কোটি টিকার জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে টিকা আসতে থাকবে।’
সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা থেকে ভালো হওয়ার পরও নানা জটিলতা রয়ে যায়। যাদের অন্যান্য রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে করোনাঝুঁকি বাড়ায়। এ জন্য সবাইকে নিজের ভালো নিজেকে বুঝে চলতে বুঝতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কখনো করোনা একেবারেই কমে যাচ্ছে, আবার নতুনভাবে নতুন শক্তিতে এই ভাইরাস আসছে। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। টিকা দেওয়ার পরও অনেকের করোনা হয়। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘টিকার কোনো সমস্যা নেই। যেখান থেকে যতভাবে হোক আমরা টিকা নিয়ে আসছি। স্বাস্থ্যকর্মীসহ তাঁদের বাড়ির কাজের মানুষ, গাড়ির চালক ও পরিবারের সদস্য, সবাই যেন টিকা পান সেই ব্যবস্থাটাও নিচ্ছি। যাতে করে কোনোভাবে সংক্রমণ না হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার করে যাচ্ছি। হ্যাঁ জানি, অনেকের বক্তব্য, অনেক কিছুই বলেন, কিন্তু বাস্তব চিত্রটা যদি দেখেন ও অন্য দেশের সঙ্গে যদি তুলনা করেন; আমাদের এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, সেই জায়গায় এটা নিয়ন্ত্রণে আমরা যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি অনেক উন্নত দেশও নিতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। আমাদের প্রচেষ্টা সব সময় আছে। আমরা শুরু থেকেই সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে আমি বলব যার যার নিজেরও সজাগ থাকা, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং নিজে সাবধানে থাকা; স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সেগুলোর দিকেও সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। করোনার প্রকোপ কমলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ এখন ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
সদ্যঃপ্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিবুর রহমান স্বপনের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার প্রসঙ্গ টেনে সংসদ নেতা বলেন, ‘কোনো আপনজন ছাড়া বাইরের কারো থেকে যদি কিডনি নিয়ে ট্রান্সপ্লান্ট করানো হয়, তা শরীর সাধারণত গ্রহণ করে না। এ জন্য অনেকেই টিকতে পারে না। অনেকেই এভাবে ট্রান্সপ্লান্ট করায়, কিন্তু এটা বেশিদিন টিকে না। যদি আপন ভাই-বোন হয়…আর অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়, কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের অনেক কিছু দেখতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘কর্মীবান্ধব নেতা ছিলেন হাসিবুর রহমান স্বপন। মানুষের জন্য কাজ করার আন্তরিকতা তাঁর ছিল। তাঁর এই অকালমৃত্যু দেশের জন্য ক্ষতি। এই সংসদে বেশ কয়েকজন সদস্যকে হারাতে হয়েছে। বারবার শোক প্রস্তাব নিতে হচ্ছে, এটা নিয়ে বলার ভাষা নেই।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ওই আলোচনায় আরো অংশ নেন বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের, সরকারদলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক সরকারদলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুল আজিজ ও বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ।
ভারতে চিকিৎসাধীন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার জন্যও সবার কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা শেষে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। পরে হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল। রেওয়াজ অনুযায়ী, চলমান সংসদের ওই সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়। অধিবেশন আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আবার বসবে।
স্পিকারসহ অন্যদের শোক
সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। এক শোকবার্তায় তিনি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। আরো শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু।