Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
১৪৯ যাত্রীর প্রাণ বাঁচানো পাইলট নওশাদ ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’

১৪৯ যাত্রীর প্রাণ বাঁচানো পাইলট নওশাদ ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’

অনলাইন ডেস্ক  :

৩০ আগস্ট, ২০২১

মাঝ আকাশে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার পরও ফ্লাইটটিকে দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করাতে সক্ষম হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দিতে অনুমতির অপেক্ষা করছে। বিমানের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউম ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর আগে রবিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে নওশাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে বিষয়টি তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করা যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওশাদের মৃত্যুর ঘোষণা এখনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেয়নি। তিনি এখনও লাইফ সাপোর্টে আছেন।

সূত্রে জানা গেছে, নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে কোমায় থাকা নওশাদ ক্লিনিক্যালি ডেড। পাইলট নওশাদের স্বজনরা এখনই লাইফ সাপোর্ট খুলে দিতে চাচ্ছেন না। তাদের দাবি, নতুন করে মেডিক্যাল বোর্ড বসানো হোক। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর তারাই সিদ্ধান্ত দিক। এ দাবিতে বিমান কর্তৃপক্ষেরও সায় রয়েছে।

বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, ক্যাপ্টেন নওশাদের মৃত্যুর খবর সঠিক নয়। এখনও তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন।

এদিকে নওশাদের দুই বোন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

হাসপাতাল কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানাচ্ছে, ‘তার (ক্যাপ্টেন নওশাদ) অবস্থা গুরুতর। তিনি সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশনের সহায়তায় বেঁচে আছেন। তার মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি কোমায় আছেন।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, “ক্যাপ্টেন নওশাদ এখন লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটার সময় তাদের বৈঠকে বসার কথা। সেখানেই তারা ক্যাপ্টেন নওশাদের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।”

গত শুক্রবার মাসকাট-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট বিজি ০২২ মোট ১২৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করে। এরপর নাগপুরের ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয়।

নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের বুদ্ধিমত্তায় জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর। বিমানের সব যাত্রীই নিরাপদে রয়েছেন। আরেকটি ফ্লাইটে করে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

ক্যাপ্টেন নওশাদের দক্ষতা ও বীরত্বের কাহিনী এটিই প্রথম নয়। ৫ বছর আগেও নওশাদ তার বুদ্ধি ও কৌশল প্রয়োগ করে আরো ১৪৯ যাত্রী, দুই পাইলট আর ৭ ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন। বিমান সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন নওশাদ। সেই ফ্লাইটটি মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা করেছিল। টেক-অফ করার পর মাস্কাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত বিমান এয়ার ক্রাফটের হতে পারে।

যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নওশাদ বিমানটি চট্টগ্রাম অবতরণ না করে ঢাকা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। অবতরণের আগে ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি নিয়ে রানওয়ের উপরে ‍দুইবার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন। তখন দেখা যায়, উড়োজাহাজের পেছনের দুই নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে ক্যাপ্টেন নওশাদ দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহই নিরাপদে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায়।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply