সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সড়াতৈলে বড়াল নদীতে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন ‘করম আলী এক্সপ্রেস’ ‘মায়ের দোয়া এক্সপ্রেস,সোনার মদিনা, উরন্ত বলাকা, নাসির এক্সপ্রেস’সহ বাহারি নামের অন্তত ২০টি নৌকা। সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা ছিপ, কোষা ও পানসি নৌকার বাইছ আর বাইছালদের দেশ্বাত্ববোধক গানে মুখরিত হয়ে ওঠে বড়াল নদীর সড়াতৈল অংশ। নৌকা বাইছ প্রতিযোগিতার নির্মল আনন্দ উপভোগ বা পছন্দের নৌকার বিজয়ে অংশিদার হতে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন নানা বয়সী নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষ।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সড়াতৈল গ্রামবাসির উদ্যোগে প্রতিবছরেই বর্ষা মৌসুমে বড়াল নদীতে আয়োজন করা হয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা এবারো শুরু হলো শুক্রবার বিকেলে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের অন্তত ২০ টি ছিপ, কোষা ও পানসি নৌকা অংশগ্রহন করছে এবারের প্রতিযোগিতায়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরসহ আশ-পাশের জেলা-উপজেলার মানুষকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চিত্র বিনোদনের সুযোগ করে দিতে পেরে আনন্দিত আয়োজকেরাও। নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলভাবে এই প্রতিযোগিতা শেষ করার সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে সড়াতৈল গ্রামবাসির পক্ষ থেকে।
ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার স্থান বড়াল নদীর সড়াতৈল অংশ সেজে উঠেছিল রঙ্গিন সাজে। ‘করম আলী এক্সপ্রেস’ ‘মায়ের দোয়া এক্সপ্রেস’সহ বাহারি নামের নৌকা ছুটে চলেছে নদীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। সাথে সাথে ছুটছে যাত্রিবাহি শত শত ইঞ্জিলচালিত নৌকা, নৌকায় থাকা দর্শকের করতালি, বাইছালদের বৈঠার আওয়াজ আর দেশাত্ববোধক গানে উৎসবের আমেজ ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে নদীপাড়ে উপস্থিত হয়েছিল বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ। সিরাজগঞ্জসহ পাবনা ও নাটোর জেলা থেকে আসা দর্শকের দাবি প্রতিবছরেই আয়োজন করা হোক গ্রাম-বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহি এই আয়োজন।
পাচঁদিন ব্যাপি এবারের প্রতিযোগিতায় ছিপ, কোষা ও পানসি তিন বিভাগে অংশগ্রহন করছেন ২০ টি নৌকা। চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় তিন বিভাগে বিজয়ী নৌকা ও বাইছালদের পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ ও টেলিভিশন। একই সাথে অংশগ্রহনকারি সকল নৌকার জন্যও রয়েছে পুরস্কার।
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে আসা রাশেদুল ইসলাম জানান, নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবার খবর পেলেই সেখানে বাইচ দেখতে যাই, বাহারি নৌকার বাইচ আর বাইছালদের গান, বৈঠার শব্দের যে অভ’তপূর্ব আনন্দ তা আসলে উপস্থিত থেকে বাইচ না দেখলে উপভোগ করা যায় না।
উল্লাপাড়া উপজেলার থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা তরুণি রেশমা খাতুন জানান, সবাই মিলে নৌকা বাইচ দেখতে আসছি, অনেক মজা করছি সবাই। আসতে কষ্ট হয়েছে, নৌকায় উঠে মাঝ নদীতে বাইচ দেখাটাও ঝুকিপূর্ন, কিন্তু এই আনন্দে সবই ভুলে গিয়েছি।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ‘উড়ন্ত বলাকা, নৌকার রাশিদুল হাসান রুবেল জানান, আমাদের নৌকা শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, আশপাশের জেলায় অনুষ্ঠিত অধিকাংশ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকে কেন্দ্র করে গ্রামে উৎসবের রব ওঠে, গ্রামবাসি প্রতিযোগিতা দেখতে যায়, বিজয়ী হতে উৎসাহও দেয়।
ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বাবু জানান, গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অংশ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। আমরা সড়াতৈল গ্রামবাসি মানুষকে নির্মল আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দিতে প্রতিবছরেই এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছি।