পাবনা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। কিন্তু কালের বির্বতনে এই নয়না ভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন গ্রাম বাংলা থেকে একেবারেই বিলিন হয়ে যেতে বসেছে। অযত্ন আর অবহেলায় গ্রাম বাংলা থেকে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা। শাপলার ইংরেজি নাম ধিঃবৎ ষরষু যার বৈজ্ঞানিক নাম হুসঢ়যধবধ হড়ঁপযধষর। শাপলা শুধু বাংলাদেশের নয় শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলা হয় নীল মাহানেল। শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয় খাল বিলে জন্মে থাকে। শাপলা একটি জলজ উদ্ভিদ, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় কয়েক রকমের শাপলা থাকলেও এর মধ্যে সাদা শাপলা জাতীয় ফুল। শাপলা ফুল যখন খাল, বিল, পুকুরে ফুটে থাকে সেখানে এক অপরুপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। এই উদ্ভিদ কোন প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই গ্রাম গঞ্জের পুকুরের ডোবা জলাশয়ে জন্মে থাকে। একাধিক গুন সমৃদ্ধ এই শাপলা যেমন সবজি অন্য দিকে শাপলার মূল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়। শাপলা যখন ফুল থেকে ফলে রুপান্তিত হয় তখন স্থানীয় ভাষায় তাকে ঢ্যাব বলা হয়। ঢ্যাবের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা একসময় রোদে শুকিয়ে চাল তৈরী করা হতো। গ্রাম গঞ্জের মানুষ শাপলার ঢ্যাব দিয়ে খই ভেজে মোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরী করতো। অনেকে আবার খাল বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এরপর বর্ষা চলে গেলে শুকনা মৌসুমে ছেলে মেয়েরা খালবিল থেকে তুলে আনতো শালুক। আগুনে পুড়িয়ে শালুক খেতে দারুণ স্বাদ। একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠির বিরাট একটি অংশ শাপলা ফুলের ডাটা তরকারি হিসেবে খেতেন। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কাছেও ভীষণ পছন্দের ফুল শাপলা। এক সময়ে পাবনার বিলে ঝিলে, পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলার বাহারি রুপ মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। কিন্তু এখন দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই দৃশ্য। বর্তমানে নদীগুলোর নাব্যতা হ্্রাস,কৃষি জমিতে ঘর বাড়ি তৈরি, জলাশয় ভরাট, ফসলি জমিতে রাসায়নিক ও কিটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিত্যাক্ত পুকুর ডোবা জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষসহ বিভিন্ন কারণে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা। চলনবিল অধ্যূষিত পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়ালের কয়েকজন বয়স্করা জানান, কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের এলাকায় প্রচুর শাপলা ফুটতে দেখা যেত। একসময় আমাদের এলাকার স্বল্প আয়ের মানুষ অভাবের সংসারে শাপলার ঢ্যাব দিয়ে চাল তৈরী করে ভাত খেতো আবার অনেকে শাপলার ঢ্যাব, শাপলার ডাটা, শালুক বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বর্তমানে নীচু জমিতে পুকুর খনন, পরিত্যাক্ত পুকুর ডোবায় আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, বিল জলাশয় ভরাট,তাছাড়াও ফসলি জমিতে মাত্রা অতিরিক্ত কিটনাশকের ফলে আমাদের এলাকায় শাপলা ফুল আর তেমন ফুটতে দেখা যায় না। এবিষয়ে সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রনি বলেন, আমাদের চলনবিল এলাকাসহ পাবনা জেলার অনেক এলাকেতেই শাপলা চাষের সুযোগ রয়েছে এতে করে অনেকাংশেই বেকার সমস্যা সমাধান হতে পারে, এছাড়াও রাস্তার ধারের পতিত খাল গুলো শাপলা উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হতে পারে এতে করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি শাপলা সবজি হিসেবে চাহিদা মিটাতে পারে।