অনলাইন ডেস্ক:
সেই ভয়াবহ ১৭ আগস্ট আজ। ২০০৫ সালের এই দিনে মুন্সীগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়। এরপর রাজধানীর গুলশানসহ দেশের অনেক স্থানে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তারা। ১৬ বছর আগের এসব ঘটনায় করা ১৬১ মামলার মধ্যে এখনো ৫৫টির বিচার শেষ হয়নি। পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি নিষিদ্ধঘোষিত এই জঙ্গিগোষ্ঠীসহ অন্যগুলোকেও। ভিন্ন নামে ভিন্ন বেশে তারা সংগঠিত হতে চালাচ্ছে নানা তৎপরতা।
যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি, জেএমবিসহ অন্যদের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বড় ধরনের হামলা চালানোর সামর্থ্য তাদের নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে তারা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একাধিক সূত্র মতে, ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৬১টি মামলা হয়। আসামি করা হয় ৭৪৭ জনকে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়। এ পর্যন্ত ১২৮টি মামলার রায় হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে ৩২০ জনকে।
তবে এর পরও দমে যায়নি জঙ্গিরা। ‘নব্য জেএমবি’ নাম দিয়ে আবারও মাঠে নামে তারা, যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সুবিধা করতে পারছে না। মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। তারা এখনো দেশে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে বলে পুলিশ ও র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আটটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংগঠনগুলো হলো—আনসারুল্লাহ বাংলাদেশ টিম (এবিটি), আনসার আল ইসলাম, শাহাদত-ই-আল হিকমা, হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি), জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হিযবুত তাহ্রীর ও আল্লাহর দল। তবে নামে-বেনামে আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে অনেকে। এর মধ্যে আনসার আল ইসলাম সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। বর্তমানে অন্তত ২০টি জঙ্গি সংগঠন রাজধানীসহ সারা দেশে সক্রিয় রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আগস্ট সামনে রেখে গত ১৬ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালায়। এরপর তদন্তে নেমে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিঘাঁটির খোঁজ পায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘১৭ আগস্ট জঙ্গিরা সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছে। সেই থেকে আগস্ট মাসে তাদের প্রতি আমাদের বাড়তি নজরদারি থাকে, যদিও জঙ্গিরা আর আগের মতো শক্তিশালী নেই। তবে এখনো তাদের তৎপরতা রয়েছে। আমরা নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমানোর চেষ্টা করছি। কোথাও খোঁজ পেলেই সেখানে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত কোরবানির ঈদের আগে জনকল্যাণমূলক কাজের নামে দেশ-বিদেশ থেকে সদকাহ ও জাকাত সংগ্রহ করেছে তারা। সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা চালাচ্ছে। ডাকাতির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লুটের পরিকল্পনাও আছে তাদের।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৭ আগস্টের সেই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরও জঙ্গিরা থেমে নই। এখনো শীর্ষ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামসহ উগ্র মৌলবাদের প্রচারণা অব্যাহত আছে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পাহাড়ে গোপনে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করেছেন বলেও তথ্য আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে জঙ্গিবাদের উৎপত্তি আফগানিস্তানকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিদের মাধ্যমে। আফগানিস্তানফেরত বাংলাদেশিরাই পরে হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জেএমবিসহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি করেছিল। এসব জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল তারা কাশ্মীরে গিয়ে যুদ্ধ করবে। তবে নানা কারণে তারা কাশ্মীরে সফল হতে পারেনি। পরে বাংলাদেশেই তারা খিলাফত কায়েমের জন্য আন্দোলন শুরু করে। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার পরে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে মোটামুটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে পুলিশ।