Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

লকডাউন ও টিভির বিকৃত রুচির বিজ্ঞাপন

স্কুলের নিচের শ্রেণিতে আপনারা-আমরা সবাই শিখেছিলাম পদার্থ তিন প্রকার : কঠিন, তরল ও বায়বীয়। অবশ্য আমাদের বগুড়া জিলা স্কুলের ক্লাস সিক্সের (১৯৫১ সাল) ক্লাস টিচার অখিলবাবু তাঁর ক্লাসে আরো একপ্রকার পদার্থের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তার নামকরণ করেছিলেন ‘অপদার্থ’। কোনো ছাত্র স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিতে মুহুর্মুহু ব্যর্থতার পরিচয় দিলে তাকে তিনি অপদার্থ অভিধায় অভিহিত করতেন। আর আজ সত্তর বছর পর অতি সম্প্রতি লকডাউনের বদৌলতে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও আমরা কঠিন, তরল ও বায়বীয়—এই তিন প্রকারের ব্যবস্থাপত্রের কথা kalerkanthoজানলাম। অবশ্য লকডাউন, ভাইরাস, করোনাভাইরাস, কভিড-১৯, মাস্ক—এসব শব্দও সব দেশের, সব মানুষের কাছে এই সেদিনও অপরিচিতই ছিল বলা যায়। আমরা লকডাউন নয়, থানার যে প্রকোষ্ঠে অপরাধীদের রাখা হয় সেই লকআপ, যার বাংলা নাম হাজত, গারদ বা ফাটক—ওটাকে চিনি সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। কল-কারখানায় যে লকআউট ঘোষণা করা হয় তা-ও জানি। কিন্তু লকডাউন? না, শব্দটির সঙ্গে কোনো কালে সাধারণ বাঙালির পরিচয় ছিল বলে মনে হয় না। আর ইংরেজি মাস্ক নয়, বাংলা মুখোশ পরে ডাকাতরা ডাকাতি করত বলে জানতাম। গত বছর থেকে আমাদের দেশে লোকে মুখোশ না পরে সরকারি হুকুমে মাস্ক পরতে শুরু করেছে। পুলিশ রিকশা থামিয়ে রিকশাচালক ও আরোহিণী কাজের বুয়াকে মুখোশ নয় মাস্ক কেন পরেনি তাই নিয়ে তম্বি করে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে বাংলা অভিধানে শিগগিরই মুখোশ শব্দের অর্থ লেখা হবে মাস্ক। অথবা ইংরেজি শব্দ টেবিল, চেয়ার, পেনসিল ইত্যাদির পাশাপাশি ‘মাস্ক’ শব্দটিও বাংলা অভিধানে স্থায়ী জায়গা করে নেবে।

হ্যাঁ, যা বলছিলাম। তিন ধরনের লকডাউনের দেখা পেলাম আমরা গত কিছুদিনের মধ্যে : কঠিন, তরল ও বায়বীয়। মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সেই প্রথম থেকে সরকারের পক্ষ থেকে বিরামহীনভাবে যে রকম আহাজারি করা হচ্ছে তাতে পুরনো দিনের ভাষায় বলা যায়, ‘পাষাণও গলে যায়’। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এত লোক-লস্কর (লস্কর শব্দটি এখানে শব্দার্থে, অর্থ সিপাই) নিয়ে নেমেও সরকার যেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। এক শ্রেণির লোক মনে হয় ‘কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো’ নীতিতে অবিচল থেকে ভিড়ভাট্টা দেখলে আরো বেশি করে হামলে পড়ে। তারা মাস্ক-মুখোশ বা নেকাব-হিজাব যে নামেই ডাকুন না কেন, ওই মুখবন্ধনীর আড়ালে মুখ লুকাতে নারাজ। জেল-জরিমানাও কবুল, তবু তারা ‘শির দেগা নাহি দেগা আমামা।’ ফলে সরকার রীতিমতো নাচার হয়ে লকডাউনের ডিগ্রি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। প্রথমে লকডাউন ছিল একেবারে ঢিলেঢালা কিসিমের। বাড়িতে থাকুন, বাড়ি থেকে বের না হলে খুশি হব টাইপের। পাবলিক আর পুলিশের মধ্যে ছিল রীতিমতো একটা খাতিরজমা সম্পর্ক। এই বায়বীয় লকডাউনে কাজ না হওয়ায় কয়েক দিন পর পুলিশের সঙ্গে মঞ্চে আবির্ভূত হলেন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব, যিনি লকডাউনের সুফল-কুফল সম্বন্ধে নসিহত করার পাশাপাশি ঘাড়-ত্যাড়াদের কাউকে কাউকে দৃষ্টান্তমূলক অর্থদণ্ডও প্রদান করলেন। কিন্তু তাতেও ব্যারাম সারার লক্ষণ দেখা গেল না। সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করা হলো ‘কঠিন’ লকডাউন—একেবারে ব্রহ্মাস্ত্র। বলা হলো, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ না যেতে, গেলে জেল-জরিমানা অবধারিত। নাহ্, তবু ‘…না শোনে ধর্মের কাহিনি।’ এদিকে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর মতো সরকার ঈদে সবাইকে পরিবার-পরিজনসহ শহর ছেড়ে গ্রামগঞ্জে যাওয়ার সুযোগ দিলেন। মানুষ কাঁঠাল-গাদা হয়ে শহর ছেড়ে গণপরিবহনে করে আণ্ডাগণ্ডাসহ ‘দেশের বাড়ি’ গেল, আবার কল-কারখানা খুলতে না খুলতে একইভাবে ফিরেও আসতে লাগল শহরে। এসব স্ববিরোধী সিদ্ধান্তের মাজেজা না বুঝলেও এটুকু অন্তত বোঝা গেল যে সরকার দেশবাসীকে লকআপে রাখার মতো গৃহবন্দি করে রাখতে চায়। এটা যে নিজের এবং আশপাশের আর দশজনের মঙ্গলের জন্য বলা হচ্ছে সেটা ‘মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত’ বাঙালি মানতে নারাজ। তারা নানা ছুতানাতায় ঘরের বাইরে যাবেই। তবে সমাজে সবাই যে ত্যাঁদড়, সবাই যে আইন-কানুনকে কলা দেখাবার জন্য মুখিয়ে থাকে, ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না, করিলে ৫০ টাকা জরিমানা,’ এই নির্দেশ দেখলে সবার যে অকারণেই প্রস্রাবের বেগ চাপে এবং ‘করিবেন না,’ কথাটির পর যে কমা সেটিকে স্থানান্তরিত করে ‘প্রস্রাব করিবেন’ শব্দগুচ্ছের পর বসিয়ে দিয়ে ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন, না করিলে ৫০ টাকা জরিমানা’ এই আদেশ জারি করে তা তো না। বরং আমার ধারণা, সমাজে আইন মান্যকারী, নিরীহ, সুবোধ গোবেচারা মানুষের সংখ্যাই বেশি। তারা লকডাউনের ফরমান জারি হওয়ামাত্র স্ব স্ব গৃহাভ্যন্তরে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে চলে যায়। যেমন গিয়েছি আমি। এবং আমার ধারণা, আমার শান্ত-সুবোধ পাঠক-পাঠিকারাও।

তা না হয় হলো। নিজের সুরক্ষার জন্যই হোক আর পুলিশি প্যাদানির ভয়েই হোক গৃহবাসী বা গুহাবাসী তো হওয়া গেল ঠিকই কিন্তু সময় যে আর কাটে না। সারা দিন টিভির সামনে সোফায় শুয়ে-বসে যে কোমরে পায়ে শিকড় গজাবার জোগাড়। খবরের কাগজের হেডলাইন থেকে প্রিন্টার্স লাইন পর্যন্ত যা কিছু ছাপা হয়েছে তা মুখস্থ পড়ার মতো গলাধঃকরণ, টিভিতে একই সংবাদ এবং একই বিজ্ঞাপনের পৌনঃপুনিকতা ও মহাপরাক্রমশালী নায়কদের খালি হাতে এক ডজন সশস্ত্র ডাকুকে অবলীলাক্রমে কুপোকাত করার আজগুবি প্রদর্শনীর সি (ছিঃ!)—নেমা যা দেখলে যেকোনো সুস্থ লোকের বিবমিষা হওয়ার কথা—এ সবই হচ্ছে লকডাউনকালে আমাদের নিত্যসঙ্গী। অবশ্য এটাও ঠিক, সরকার ‘কঠিন’ লকডাউন না দিলে দৈনিকগুলোর রগরগে বর্ণনাসংবলিত ক্রাইম রিপোর্টসমূহ বা ‘আব্দুল, সিটি মার’ মার্কা সি (ছিঃ)—নেমা দেখার ফুরসতই হয়তো হতো না। ওহ, ‘আব্দুল সিটি মার’ আবার কোন কিসিমের ‘ফিলিম’ জানতে চাইছেন? শুনুন তা হলে। এটা সেই পঞ্চাশের দশকের ‘কাহানি’ যখন জুম্মন মিয়া-ছক্কু মিয়ারা পুরান ঢাকার নাগর মহল সিনেমা হলে দল বেঁধে ‘বই’ দেখতে গিয়ে বলতে গেলে হলের ইজারা নিয়ে নিত, আর শিস দেওয়া (পুরান ঢাকার ভাষায় সিটি মারা), তালিয়া বাজানো ইত্যাদির ফুলঝুরি ছোটাতো। তা একবার জুম্মন মিয়া তার ইয়ার-বক্সিদের দিলীপ কুমার-মধুবালা সম্বন্ধীয় একটা বাজিতে হারিয়ে দিয়ে নাগর মহলের বক্সে বসে সিনেমা দেখার একটা টিকিট পেল। সে তো গেল সিনেমা দেখতে কিন্তু গিয়ে পড়ল বেকায়দায়। আশপাশে সব ধোপ-দুরস্ত কাপড়চোপড় পরা সাহেব-মেমসাহেব। শুরু থেকেই বেশ অস্বস্তি লাগছিল জুম্মনের। সে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছিল না, শিস দেওয়া, তালি বাজানো তো দূরের কথা। এমন সময় পর্দায় দেখা দিলেন স্বল্পবসনা কয়েকজন নর্তকী এবং এসেই হাত-পা ছুড়ে তারা শুরু করলেন মার কাটারি মার্কা নৃত্য, যা দেখে জুম্মনদের ‘এটিকেট’ অনুযায়ী জোরসে তালিয়া বাজানো এবং সিটি মারার কথা। কিন্তু জুম্মন লক্ষ করল, হলের সামনের দিকের থার্ড ক্লাসে যেখানে তার দোস্তরা আস্তানা গেড়ে বসার কথা, সেখান থেকে কোনো কারণে তালির আওয়াজ বা শিসধ্বনি আসছে না। এদিকে আশপাশের ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলাদের উপস্থিতির কারণে সে-ও নাচার। উত্তেজনায় অস্থির হয়ে সে হাঁক দিল : আব্দুল, সিটি মার।

২.

সেই জুম্মন মিয়া-ছক্কু মিয়া, সেই নাগর মহল আর নেই। (স্মর্তব্য : মান্না দের বিখ্যাত গান, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই)। তবে আমাদের কর্তৃপক্ষ যে একেবারে বেরহম নন, নাগর মহল সিনেমা হল না থাকলেও সমঝদার পাবলিকের কথা ভেবে যে সিটি মারার আঞ্জাম তাঁরা ঠিকই করে রেখেছেন তা বোঝা যায় টিভির চ্যানেল ঘুরালেই। একেবারে ‘টপলেস’ নওয়াবজাদি থেকে শুরু করে কী নেই আমাদের টিভি বিজ্ঞাপন চিত্রগুলোতে। একটি দাঁতের মাজনের মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে একজন তরুণ ও ময়দার কাই প্রস্তুতকারিণী একজন তরুণীর হাস্যোজ্জ্বল যুগলমূর্তিকে এক দেহে বিলীন করার প্রয়াস পেতে হবে কেন বোঝা মুশকিল। তেমনি একটি সদ্য রজঃস্বলা কিশোরীকে শ্রেণিকক্ষে ঘরভর্তি তার সহপাঠিনী ও শিক্ষিকার সামনে উচ্চৈঃস্বরে কেন ঘোষণা দিতে হবে যে রক্তস্রাবের কারণে সে দাঁড়িয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। একটি অবোধ শিশুর মুখে এরূপ একটি অশালীন বাক্য সজোরে উচ্চারিত হতে শুনলে কর্তাব্যক্তিদের কানে তা বাজে না বোধ হয়, তবে যেকোনো ভদ্র নারী-পুরুষ নিশ্চয়ই লজ্জায় অধোবদন হবেন।

যে ‘টপলেস’ নওয়াবজাদির কথা একটু আগে বললাম তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের একজন নামকরা অভিনেত্রী। অনেক ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছে। এই সুন্দরী শুধু ভারতের এক বিখ্যাত নওয়াব পরিবারের পুত্রবধূই নন, ব্যক্তিগতভাবে অগাধ ধন-দৌলতেরও মালিক তিনি। তিনি যে সাবানের বিজ্ঞাপনে নিজেকে অনাবৃত করে অভিনয় করেছেন সেই সাবান তাঁর জন্মের আগে থেকেই এই উপমহাদেশে অত্যন্ত সুপরিচিত। বরং তাঁর এহেন উপস্থাপনের কারণে আমি বলব, পণ্যটি (সাবান) জনপ্রিয়তা হারাতে পারে। কারণ লোকে বলবে, ব্যাপারটা কী? তা হলে কি এই সাবান আর আগের মতো উত্কৃষ্ট নয়? আর সে জন্যই কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে নওয়াবজাদিকে বাথটাবে নগ্নিকার ভূমিকায় নামাতে হয়েছে?

ইদানীং বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণে আরেকটি প্রবণতা লক্ষণীয়। তা হচ্ছে, কোনো কার্যকারণ ছাড়াই শয়নকক্ষে নারী-পুরুষের আবেগঘন অন্তরঙ্গ দৃশ্য প্রদর্শন। ভাবটা যেন এমন, সব কিছু খুল্লম খুল্লা করে না দেখালে নির্বোধ (নির্মাতার ধারণায়) দর্শক মেসেজটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে না। যে বহুজাতিক কম্পানি এত দিন পর্যন্ত তাদের বিজ্ঞাপনে কোনো প্রকার অশ্লীলতার প্রশ্রয় না দিয়ে যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল, তারাও দেখছি এখন অন্যদের মতো স্মার্ট হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে সব কিছু হাতে-কলমে শেখাতে চাইছে। কাজটা কি ভালো হলো?

৩.

এখানে বড় প্রশ্ন হলো, এ ধরনের অশ্লীল উপস্থাপন কি আমাদের চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি ও রুচিবোধের পরিপন্থী নয়? হালে আমাদের দুটো পয়সা হয়েছে, মানলাম, তাই বলে কি হঠাৎই আমরা মুম্বাই, হলিউড, টালিউড হয়ে যাব? আমাদের তরুণসমাজ যে আজ দ্রুত মাদকাসক্ত, ধর্ষণাসক্ত হয়ে উঠছে তার পেছনে আমাদের কর্তৃপক্ষের এরূপ আস্কারা কি বড় ভূমিকা পালন করছে না? এ ধরনের অশ্লীল, সুড়সুড়িমূলক বিজ্ঞাপন সেন্সরের ছুরি থেকে বাঁচে কী করে? এগুলো দেখার দায়িত্বে কি কোনো দায়িত্বশীল, রুচিবান মানুষ নেই? নেই কোনো সংস্কৃতিবান শিক্ষিত মন্ত্রী-মিনিস্টার? এক দিন-দুদিন নয়, বছরের পর বছর এ ধরনের সম্পূর্ণ অহেতুক, অযৌক্তিক যৌন আবেদনমূলক বিজ্ঞাপন টিভির ৩০-৪০টি চ্যানেলে দিনে এক শবার করে দেখানো হবে, আর তার পরও আমরা মনে করব আমাদের তরুণ-তরুণীরা বেপথু হবে না? যাদের জবাব দেবার কথা তারা জবাব দিন। তা না হলে এ আগুন শুধু যদু-মধু-কদুকে নয়, দ্রুত আপনাকে-আমাকেও স্পর্শ করবে। আর ঠিক করে বলুন তো আপনারা যখন বাসায় ড্রয়িংরুমে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়ে, তাদের মা, আপনার বুড়ো মা-বাবা বা কোনো মেহমানের উপস্থিতিতে এসব বিজ্ঞাপনচিত্র দেখেন, তখন কেমন লাগে আপনাদের? তখন কি আপনারা ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে হাজিরানে মজলিসের সঙ্গে নিজের তৃপ্তিটুকু শেয়ার করেন? নিশ্চয়ই না। বরং আপনারা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। লজ্জায় আপনাদের কান লাল হয়ে যায়। ঠিক না? তাহলে কেন আপনারা ক্ষমতায় থেকে এগুলো বন্ধ করেন না? এমনিতে দুর্নীতি, ধান্দাবাজি, ঠকবাজিতে দেশটাকে হাবিয়ার দোযখ বানাচ্ছে এক শ্রেণির লোক—তাও কারো না কারো প্রশ্রয়ে—তার ওপর এসব অশ্লীলতার বিষফোড়া তো ক্যান্সারাক্রান্ত করে ফেলছে দেশটাকে। অথচ এই গুটিকয়েক দুষ্ট প্রকৃতির লোকের অপতৎপরতা ছাড়া বাকি শতকরা ৯০টি বিজ্ঞাপনই তো যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। অনেকগুলোতে পাই হাস্যরসের খোরাক। কিছু কিছু বুদ্ধিদীপ্ত বিজ্ঞাপনচিত্র তো রীতিমতো পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।

৪.

বিকৃত রুচির বিজ্ঞাপন নিয়ে আমরা আগেও কথা বলেছি কিন্তু খুব একটা কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। মুম্বাইয়ের এক জনপ্রিয় অভিনেতা টয়লেট পরিষ্করণের দায়িত্বে নেমেছেন। তিনিও ভারতের একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। তাঁর এই করুণ পরিণতি দেখে মায়া লাগে। শেষ পর্যন্ত টয়লেট পরিষ্কার করার কাজ! কিন্তু আমার আপত্তি তাতে নয়। যেভাবে ক্লোজ-আপ শটের পর শট দিয়ে কমোড এবং প্যানগুলো দেখানো হয় তাতে মনে হয় এসব অ্যাডের নির্মাতাদের রুচিবোধ বলতে কিছু নেই। না থাকুক। পয়সা কুড়াতে তারা বিষ্ঠা ছেনে যদি সুখ পায় পাক। কিন্তু আমরা অর্থাৎ যে বাংলাদেশ চিরকাল সুরুচি ও সুকুমার বৃত্তির জন্য প্রশংসিত হয়েছে, সেই বাংলাদেশের নাগরিকদের টিভি পর্দায় দিন-রাত কেন এত কুরুচিপূর্ণ অ্যাড দেখানো হবে? ফর গডস্ সেক, এগুলো বন্ধ করুন। নইলে আমরা বুঝব, ওই সব মালটি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা সত্যি সমঝে চলেন। তাঁদের কাছে নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সভ্যতার চেয়ে ওই মাসলপাওয়ারদের দাম বেশি। এ-ও বুঝতে শুরু করব, দুষ্ট লোকে যে বলে এসব করতে দেওয়া হয় বড় রকমের ‘কোনো কিছু’র বিনিময়ে তা আসলে সত্যি। আল্লাহ করুন, আমাদের ধারণা যেন মিথ্যা হয় এবং এসব অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ টিভি-বিজ্ঞাপন যেন অচিরেই বন্ধ হয়। আমরা আমাদের সন্তানদের অবশ্যই ভালোবাসি, আমরা অবশ্যই চাই না তারা বিপথে পা বাড়াক। আমরা চাই তারা সুনাগরিক হয়ে বেড়ে উঠুক।

লেখক : মোফাজ্জল করিম, সাবেক সচিব, কবি

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply