অনলাইন ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের বহুমুখী প্রতিভার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, শেখ কামালের সাদাসিধা জীবনে দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের পাশে থাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা ক্রীড়া অঙ্গন—এই সব কিছুর উন্নতি করা, এটাই ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় কথা।
শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে টোকিও অলিম্পিক গেমস থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রবর্তিত এই পুরস্কারের জন্য সাতটি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেখ কামাল বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তন করে, খেলাধুলাকে উন্নত করে এবং আবাহনী ক্রীড়া চক্র গড়ে তোলে। ঠিক এর আগে আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটা করার পেছনে একটা উদ্দেশ্য ছিল—ধানমণ্ডি এলাকায় তখন খেলাধুলা বা শিশুদের প্রতিভা বিকাশের কোনো সুযোগ ছিল না; তাই অঞ্চলের শিশু এবং তরুণদের জন্য একটা খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করাই ছিল কামালের উদ্দেশ্য এবং সে এ ব্যাপারে আলোচনা করেই প্রতিষ্ঠানটা গড়ে তোলে। কাজেই তার সাথে এবং পাশাপাশি আমরা সবাই ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘কামাল যেমন খেলাধুলার দিকে, তেমনি সাংস্কৃতিক চর্চার দিকেও ছিল। চমৎকার গান গাইতে পারত। স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী সে গড়ে তোলে। নাট্যচর্চার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল। সুরেলা গানের গলার সঙ্গে সে চমৎকার সেতার বাজাতে পারত।’
ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে আরো ভালোভাবে গড়ে তোলা শেখ কামালের লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে স্বাধীনতার পর দেশের ক্রীড়া অঙ্গনকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে শেখ কামালের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে আধুনিক ফুটবল খেলা বা ক্রিকেট খেলা বা এই যে খেলাধুলা, সেটাকে একটা আধুনিকতার ছোঁয়া এবং সংগীতজগতে বা সাংস্কৃতিক জগতে, সেখানেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সে অনেক অবদান রেখে গেছে আমাদের সমাজের জন্য।’
তিনি বলেন, যুবসমাজকে সুসংগঠিত করার অনেক কাজ করে গেছে কামাল। বেঁচে থাকলে হয়তো যুবকদের জন্য আরো কিছু করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আব্বা যেমন এ দেশের জন্য সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সন্তান হিসেবে আমরাও একদিকে যেমন পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি, কিন্তু সেই কষ্টকে আমরা কখনো কষ্ট মনে করিনি। আমার মা সেটা করতে দেননি। কোনো হা-হুতাশ বা চাওয়া-পাওয়ার কিছু ছিল না। একটা আদর্শ নিয়ে সাধারণভাবে চলা, দেশের জন্য কাজ করা, দেশের মানুষের জন্য কাজ করা এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসা—এটাই শিক্ষা। সেই শিক্ষাটাই কামাল অনুসরণ করেছে।’
পিঠাপিঠি ছোট ভাই শেখ কামালের সঙ্গে একত্রে বড় হওয়ার স্মৃতিচারণা করে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তাঁর বড় বোন শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসঙ্গে বড় হয়েছি, একসঙ্গে চলতাম। খেলাধুলা, পড়ালেখা ও ঝগড়াও করেছি। ভালো বোঝাপড়া ছিল আমাদের মধ্যে। যেকোনো কাজে আমার সঙ্গে পরামর্শ করত। একরকম নির্ভর করত আমার ওপর। বাবার স্নেহ থেকে সে বঞ্চিত ছিল, যার কারণে মনে অনেক আক্ষেপ ছিল। আব্বা তাকে আদরও করতেন বেশি। কামালের অনেক গুণ ছিল। সে যে কাজেই হাত দিত, সেখানে তার মেধার স্বাক্ষর রেখে আসত।’
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগেও শেখ কামালকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটা চক্রান্ত করে কামালকে গুলি করা হয়। তাকে হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে যখন বেঁচে যায়, তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়। অথচ রাষ্ট্রপতির ছেলে বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, জাতির পিতার ছেলে অত্যন্ত সাদাসিধা জীবন যাপন করত। কখনো বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি—সে জন্য অর্থ-সম্পদের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না।’
ক্রীড়াবিদ হিসেবে রোমান সানা (আর্চারি), মাবিয়া আক্তার সীমান্ত (ভারোত্তোলন), মাহফুজা খাতুন শিলা (সাঁতার), ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মনজুর কাদের (শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব) এবং ক্যা শৈ ল হ্ন (কারাতে ফেডারেশন), উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হিসেবে আকবর আলী (ক্রিকেট) ও ফাহাদ রহমান (দাবা), উন্নতি খাতুন (ফুটবল), ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন/সংস্থা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, আজীবন সম্মাননায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কাজী মো. সালাহউদ্দিন, ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওয়ালটন শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার লাভ করে। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আক্তার হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তিনিই বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে শেখ কামালকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজাহার তান্না এবং আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশীদ বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ কামালকে নিয়ে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থের মোড়কও উন্মোচন করেন। শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয় এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।