আবদুর রশিদ নাইক্ষ্যংছড়িঃ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু গ্রাম টানা অতি বর্ষণে ও পাহাড়ী ঢলে আবারও প্লাবিত হয়েছে। এই যেন এক হ্নদয় বিদারক দৃশ্য, পানিবন্দি অসহায় মানুষরা জীবন বাচাঁতে দিক-বেদিক ছুটছে এক মাত্র আশ্রয়কেন্দ্র ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে।
রবিবার ( ১-আগষ্ট) পানিবন্দী তুমব্রু পশ্চিমকূল, হিন্দুপাড়া, বাজার পাড়া, কোনার পাড়া, মধ্যম পাড়া ও পানিতে ভাসমান তুমব্রু বাজারে ৫০/৬০টি দোকানসহ মৎস্যচাষীদের পুকুর ।
বাজার ব্যবসায়ীদের ২য় বার পানিবন্দী হওয়ায় প্রতিটি দোকানের মালিকরা বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। ক্ষতিগ্রস্হ দোকান মালিকদের এই যেন এক নিরব কান্না! তাদের আত্মচিৎকারে এলাকার আকাশঁ বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে।
তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ী ইমাম হোসনের সাথে কথা বলে জানাযায়, ১ম ও ২য় বার টানা বর্ষণের কারনে পানিতে ভাসমান অবস্হায় প্রায় ৩ লক্ষ টাকার বিভিন্ন মালামালের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হই। তিনি আরো জানান, ধার,দেনা কর্য করে দোকানে মুলধন দিয়ে মালামাল মজুদ করে ছিলাম,এমতাবস্হায় হঠাৎ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেল আমার সাজানো ব্যবসার ফসল। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ব্যবসায়ী ইমাম হোসেনর স্বপ্ন গুলো, কিভাবে দেনা কর্য গুলো পরিশোধ করব একমাত্র আল্লাহ জানে আমার এই ক্ষত শুকাতে কয়দিন কয় বছর লাগে। এদিকে ইমাম হোসেন স্হানীয় ইউপি ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আর্থিকভাবে সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন’।
মৎস্য চাষী তুমব্রু বাজার পাড়ার হামিদুল হক দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেন, চলতি মৌসুমে বাজারের নিজ মালিকানাধীন অন্তত ৪০ শতক পুকুরে মাছের চাষ করি।এতে রুই,কাতাল,মাগুর,তেলাপিয়া,কৈ,টেংরা, সহ নানা প্রজাতির দেড় লাখ টাকার পোনা ছাড়ি।মৎস্য পুকুর পরিচর্যার শ্রমিক, মাছের খাবার সহ অনুসাঙ্গিক খরচ মিলে অন্তত ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি।গত ১ বসর বয়সের মাছ বিক্রির জন্যও ধরা হয়নি। গত ২৭ জুলাই ও ৩১ জুলাই শুরু হওয়া টানা প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের পানি নেমে মৎস্য পুকুরে প্লাবিত হয়ে সম্পূর্ণ মাছ ভেসে গেছে।আপ্রান চেষ্টা করেও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।এমন সময়ে ব্যবসায়ীক সুফল ভোগ করার আগেই স্বপ্ন ভেসে গেল।ধারদেনা করে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে মাথায় ওঠেছে আমার।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গত রাত থেকে আবারও টানা অতিবর্ষণের ফলে পাহাড়ী ঢল এসে তুমব্রু এলাকা প্লাবিত হয়ে চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন,নিজে ও ইউপি সদস্যদের নিয়ে পুনরায় পানিবন্দী মানুষকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা এবং অক্ষত অবস্হায় নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র ইউপি পরিষদ ও তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে আসি এবং তাদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করি। তিনি আরো বলেন, ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের মংজয় পাড়াতে পাহাড় ধসে ঘরসহ একই পরিবারের তিনজন আহত হয়েছে,আহতদের সুচিকিৎসার জন্য ওয়ার্ড মেম্বারকে যাতাযত ব্যবস্হা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে । তাছাড়া ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড়ের স্হানীয় সচেতন মহলসহ ইউপি সদস্যদেরকে স্হানীদেরকে নিরাপদ স্হানে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য:: গেল মাসের ২৭ তারিখ টানা বর্ষেণের পাহাড়ী ঢলে ঘুমধুম ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত ও পাহাড় ধসে বাড়িঘর ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পুরো ইউনিয়নবাসী। যার দুঃখ কাটিয়ে ওঠার আগেই রবিবার ১আগষ্ট টানা বর্ষণের পাহাড়ী ঢলে আবারও প্লাবিত হয় ঘুমধুম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।একদিকে লকডাউন অন্যদিকে পানিবন্দী মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলেছে। অসহায় পানিবন্দী মানুষরা দিশেহারা, এ যেন এক করুন কাহিনী!