বরগুনা প্রতিনিধি:
পুত্র ও পুত্রবধু কর্তৃক বিধবা মাকে মারধর করে স্বামীর ভিটা-বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া অভূক্ত বিধবা আলেয়া বেগম (৬৫) বাড়িতে খাদ্য সহয়তা পৌছে দিয়েছেন বরগুনার পুলিশ সুপার । শুক্রবার বিকালে পুত্র ও পুত্রবধু নির্যাতনের শিকার কয়েক দিনের অভূক্ত ঔই বিধবা আলেয়া বেগমের হাতে খাদ্য সহয়তা তুলে দেন বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গির মল্লিক । এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম তারিকুল ইসলাম ও ওসি তদন্ত মো. শহিদুল ইসলাম, মাইটিভি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম স্বপন প্রমূখ।
দীর্ঘ দিন পুত্র ও পুত্রবধুর ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো কয়েক দিনের অনাহারী অভূক্ত বিধবা আলেয়া বেগমের বাড়িতে পুলিশ সুপার খাদ্য সহয়তা নিয়ে গেলে বৃদ্ধ আলোয়া কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। কয়েক দিনের অনাহারী বিধবা বৃদ্ধা আলোয়া তৎক্ষনাত আবেগে আবেগপ্লুত হয়ে পরেন । ন্যায় বিচার পেতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জেলার সর্বো”্চ কর্মকর্তা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গির মল্লিক কে কাছে পেয়ে নিজ সন্তান ও পুত্র বধুর নির্যাতনের কথা বর্ননা করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তান ও পুত্রবধুর পাশবিকতার নির্যাতনের মাধ্যমে এক কাপড়ে তাড়িয়ে দেয়ার কাহিনী বর্ণনা করেন । পুলিশ সুপার বৃদ্ধার সব কথা শুনে তাকে ন্যায় পাইয়ে দেয়ার আশ্বা দেন।
মামলা থেকে নেয়া, গত (২৬ জুন) শনিবার সকাল ১০টার সময় বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের মৃত-মুজাফফর হাওলাদারের স্ত্রী বিধবা আলোয়া বেগম (৬৫) কে স্বামীর ভিটা ও তার মেয়ে মনিরা আক্তারকে বাবার বাড়ি-ঘর থেকে জোর-পূর্বক বের করে দিতে চায় তার পুত্র মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫), পুত্রবধু অনিতা (৩০) ও নাতী আলিফ। এতে মা আলোয়া বেগম (৬৫) ও বোন মনিরা বাঁধা দিলে ছেলে মনিরুজ্জামান জুয়েল বৃদ্ধা মাকে ইটের দেয়ালে মাথা টাকিয়ে এলো-পাথারি কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে মুখের দুটি দাঁত ফেলে দেয়। পিটিয়ে হাতে ফোলা জখম করে।
এ সময় আহত আলেয়া বেগমের মেয়ে মনিরা আক্তার মা’কে ও নিজেকে ভাই -ভাবীর অত্যাচার থেকে বাঁচাতে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহয়তা চায়। পুলিশ ঘটনা স্থলে না গিয়ে তাদের থানায় আসার পরামর্শ দেয় । আলেয়া বেগম আহত হওয়ায় পুলিশ তাকে থানায় না এসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে প্রতিবেশীরা তাদের মা-মেয়েকে দুজনকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
বছর খানে পূর্বে স্বামী মুজাফফর হাওলাদার মারা যায়, কন্যা মনিরা কে নিয়ে মৃত স্বামীর ঘরে সন্তানদের আগলিয়ে রেখে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করে আলোয়া । মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব পুত্রদ্বয় তাদের পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের মা আলোয়া ও বোনের মনিরার কোন ভরণ পোষণ দেয় না। উল্টো বাবার মৃত্যু পরে মা-বোনের ফরায়েজ অনুসারে সম্পত্তির প্রাপ্ত অংশটুকু বন্ধক রেখে সব টাকা পয়সা ঐ দুই ছেলে নিয়ে যায় ।
এর প্রতিবাদ করায় গত ১২ জুন সকালে মা ও বোনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ছেলে মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব (৩০) ও বড় ছেলে স্ত্রী অনিতা (৩০)। মাকে খুনের উদ্দোশ্যে মারধর করে। বাড়ি-ঘর থেকে এক কাপড়ে তাড়িয়ে দেয় এবং প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মা ও বোনের ঘরে থাকা মালামাল ও স্বর্নালংকার চুরি করে নেয় পুত্র ও পুত্রবধু এমন অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী মা আলোয়া বেগম (৬৫ ) আদালতের শরনাপন্ন হন এবং পুত্র ও পুত্রবধরু নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলার আসামী পুত্রবধু অনিতা জামানকে ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠায় বিজ্ঞ আদালত । তবে এ মামলার অপর আসামীরা আটক না হওয়া নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে বিধবা আলেয়া বেগম এমনটি দাবী করে বৃদ্ধা আলেয়ার।
এ ব্যাপারে আলোয়ার আইনজীবি গোলাম সাজ্জাদ মিশকাত প্রতিবেদকে ( ১৮ জুলাই ) রোববার বিকালে জানান এ মামলার শুনানির দিন আগামী কাল ১৯ জুলাই সোমবার ধার্য করেছে বিজ্ঞ আদালত ।