অনলাইন ডেস্ক:
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকমের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।
আজ শনিবার (১৭ জুলাই) দুদকের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতির অনুসন্ধান চলাকালে গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সূত্র আরো জানায়, গত ৮ জুলাই গ্রাহক ও মার্চেন্টের ৩৩৯ কোটি টাকার হদিস না থাকার বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশত্যাগ করলে সার্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় গত ৮ জুলাই ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় দুদক।
এদিকে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করাসহ নানা অভিযোগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসা আর্থিক অনিয়মগুলো তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইভ্যালি ডটকমের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬.১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক এবং পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা ওই কম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে নেওয়া ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, যা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।’
গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম এবং মার্চেন্টের পাওনা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ ও পাচারের’ অভিযোগে এরই মধ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এর অংশ হিসেবে রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এক-দুই মাসের আগাম সময় নিয়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন ‘অফার’ দেওয়া শুরু করেছিল ইভ্যালি। তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি, প্রাইভেট কারসহ নানা পণ্যের ক্রেতাদের ভিড় জমেছিল ইভ্যালিতে। স্বল্প মূল্যের এসব পণ্যের জন্য টাকা নেওয়া হতো অগ্রিম, কিন্তু কিছু ক্রেতাকে পণ্য দিয়ে বাকিদের অপেক্ষায় রাখার কৌশল নিয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে পরে অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
চলতি মাসের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নীতিমালায় বলা হয়, অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোকে পণ্যের অর্ডার নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা সরবরাহ করতে হবে এবং ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম টাকা নেওয়া যাবে না। এর পর থেকে ভাউচারের অফার দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতে ক্ষতির মুখে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা।