অনলাইন ডেস্ক:
শুরুতে এগিয়ে থেকেও মাঝে টিকায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ার পর আবার গতি ফিরতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। গতকাল বুধবার থেকে আবার শুরু হয়েছে ৩৫ বছর বয়সের ওপরের সবার জন্য টিকা নিবন্ধন কার্যক্রম। সেই সঙ্গে টিকা সংগ্রহেও গতি এসেছে। চলতি মাসেই কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় আরো ৩৫ লাখ টিকা আসবে জাপান থেকে। এর মধ্যে থাকবে অক্সফোর্ডের টিকাও। পাশাপাশি চীন থেকেও এ মাসে আরো টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে রাশিয়া থেকেও আসছে টিকা। পাশাপাশি দেশেই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে আসছে গতি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বলেন, ‘আশা করি এখন আর আমাদের টিকার সংকট থাকবে না। অনেকগুলো মাধ্যম থেকেই আমরা পর্যায়ক্রমে টিকা পেতে শুরু করেছি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরেরও সহায়তা নিচ্ছি। যারাই আমাদের কাছে আসছে, কাউকে না করছি না। বিধি-বিধান ঠিক রেখে টিকা পেলেই হলো।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ থেকে টিকা আনার পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে দেশেই টিকা উৎপাদন। এ জন্য আমরা সরকারিভাবে প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছি। পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরও এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া দেশে টিকা তৈরিতে প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে কাজ করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। দেশের একাধিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে কাজ করছে। বেক্সিমকো ফার্মা ও ইনসেপ্টাসহ আরো একাধিক কম্পানি আছে প্রক্রিয়ায়। তবে এখন পর্যন্ত ঠিক কোন প্রতিষ্ঠান কোন দেশের টিকা উৎপাদন করবে, সেটা চূড়ান্ত হয়নি। এমনও হতে পারে, একই দেশের টিকা এখানে একাধিক কম্পানিও তৈরি করতে পারে।’
এদিকে ঢাকায় চীনের মিশন উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান গত মঙ্গলবার তাঁর ফেসবুক পেজে জানান, যৌথভাবে নভেল করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের অংশীদারদের সঙ্গে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। তিনি লিখেছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যৌথভাবে করোনার টিকা উৎপাদনের জন্য চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এখানকার
অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। চীন এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি দেশে করোনার টিকা সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সে এক কোটি ডোজের প্রথম চালান হস্তান্তর করতে যাচ্ছে।
হুয়ালং ইয়ান জানান, বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ প্রথম যে ব্যাচের টিকা হাতে পেয়েছে, তা চীনের। অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণার পাশাপাশি টিকা উৎপাদন করছে চীন। একই সঙ্গে চীন অনেক দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দেশে টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাতে সহায়তা করেছে।
তিনি আরো লিখেছেন, চীনের তৈরি করোনার টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকরিতা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। ফলে চীনের টিকা আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এরই মধ্যে চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে দেড় কোটি টিকা কিনতে চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টিকার প্রথম চালান গত শনিবার ঢাকায় এসেছে। এ ছাড়া চীন বাংলাদেশকে দুই দফায় ১১ লাখ টিকা উপহার দেয়।
বাংলাদেশ গত মাসে চীনের সিনোভ্যাক টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের স্থানীয় এজেন্ট ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। ইনসেপ্টার সঙ্গে চীনের প্রতিষ্ঠানটি যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করতে চায়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গতকাল ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, দেশে নতুনভাবে টিকাদান কর্মসূচিতে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া মডার্না এবং চীনের সঙ্গে চুক্তির আওতায় কেনা সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে। মডার্নার টিকা দেওয়া হবে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় আর সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। তিনি জানান, রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ছাড়া কেউ টিকা নিতে পারবেন না।
এদিকে গতকাল থেকে নিবন্ধন শুরু হলেও সুরক্ষা অ্যাপসের গতি ছিল খুবই ধীর। অনেকেই নিবন্ধন করার চেষ্টা করেও পারেননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এ বিষয়ে বুলেটিনে বলেন, একসঙ্গে বহু মানুষ ঢুকলে হয়তো গতি কিছুটা কম হতে পারে।