Sunday , 24 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
কুষ্টিয়ায় আরও ১৩ জনের মৃ’ত্যু !! শনাক্ত-৪৩২

কুষ্টিয়ায় আরও ১৩ জনের মৃ’ত্যু !! শনাক্ত-৪৩২

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি !!!

করোনা সংক্রমণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় প্রথম কুষ্টিয়া। জুন মাসে পুরোটাই কুষ্টিয়ায় করোনা দাপট ছিল। অস্বাভাবিক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে কুষ্টিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু।  
কুষ্টিয়ায় টানা ২৪ দিনের বিধিনিষেধ শেষে গতকাল সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ১১ জন ও উপসর্গ নিয়ে ২ জন মারা গেছেন। মোট মৃত্যু ১৩ জন। আর সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষায় আবারও একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে সাড়ে ১০টার দিকে  কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.তাপস কুমার সরকার,এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 
জানা যায়,  একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড ১ হাজার ২২১ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩৫.৩৮ শতাংশ। মোট শনাক্ত ৪৩২ জন। মোট মৃত্যু ১৩,জন। শনাক্তদের মধ্যে সদরেই ১০৯ জন, আর সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুরে ৭৩ জন, ভেড়ামারায় ১০২ জন। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১০৩ জন।
এদিকে গত ৭ দিনে কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ৬৬২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর এই ৭ দিনে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৭২ জনের মৃত্যু হলো।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টু জানান , প্রতি ঘরে করোনা পৌঁছে গেছে। সঠিকভাবে ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই কাজটা গ্রামের মানুষ করছেন না। এতেই মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ এস এম মুসা কবিরের জানান , এখন আর কোনো দোষারোপ না করে কাজে মনোযোগ দিতে হবে। গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সবাইকে খোঁজ নিতে হবে। কারও জ্বর, ঠান্ডা, কাশি জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা নিতে যত দেরি হবে, মৃত্যুর ঝুঁকি তত বাড়বে।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, করোনা ডেটেকিডেড কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে ২শ’ বেডে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে আছেন ২৬২ জন রোগী। প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। বিআরবি ১০ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও ১০০ সিলিন্ডার অক্সিজেনসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে হাসপাতালে অক্সিজেন সহায়তা দিয়েছে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনে হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৮-১০ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জুনে করোনার দাপট বাড়বে, এমন একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তবে এতটা হবে, সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। মানুষকে সচেতন করা ছাড়া আর করোনা মোকাবিলার কোনো পথ নেই।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার  খাইরুল আলম বলেন, কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে। সবার কাছ থেকে লকডাউন কার্যকর করতে সহযোগিতা পাচ্ছি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহের জন্য কুষ্টিয়ায় চলমান লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এ লকডাউন। এ সময় ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বাকি সব ধরনের দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ৫২ জন চিকিৎসককে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদের মধ্যে কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২৬ জন, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন এবং ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন চিকিৎসককে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে একযোগে ৫২ চিকিৎসককে তিন হাসপাতালে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply