অনলাইন ডেস্ক:
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের নৃশংসতাকে আধুনিক সভ্যতার গুরুতর অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জনক ও প্রখ্যাত দার্শনিক নোম চমস্কি। গতকাল বুধবার সকালে ‘টি কাপের’ ফেসবুক লাইভে বাংলাদেশি তরুণ তানভীরুল মিরাজ রিপনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আরো বলেছেন, ’৭১-এর ওই নৃশংসতা ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার সম্ভাব্য সব কিছুই করেছিলেন। কিসিঞ্জারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে লজ্জাজনক বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নোম চমস্কির কাছে প্রশ্ন ছিল, ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন প্রশাসনের ভূমিকাকে তিনি কিভাবে দেখেন? নিক্সন প্রশাসন বাংলাদেশ প্রশ্নে পাকিস্তানি সামরিক একনায়কতন্ত্রকে সমর্থন করেছিল।
জবাবে চমস্কি বলেন, হেনরি কিসিঞ্জার পরিকল্পনা অনুযায়ী বেইজিং সফরে যেতে চাননি। তিনি গোপন সফর চেয়েছিলেন। তিনি আকর্ষণীয় এমন একটি সফর চেয়েছিলেন, যা হবে বড় ঘটনা ও গণমাধ্যমের বড় খবর। এরপর তিনি নতুন এক বিশ্ব সৃষ্টির চমৎকার প্রশংসা পাওয়ার আশা করেছিলেন।
চমস্কি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পাকিস্তানের আক্রমণ কিসিঞ্জারের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছিল। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। কারণ এতে (পাকিস্তান বাংলাদেশে আক্রমণ করা) তার নিজের ভবিষ্যৎ জীবন আরো এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়। তিনি (কিসিঞ্জার) পাকিস্তানের আক্রমণ, হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞকে সমর্থন করেন। ভারত যখন হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল তখন তিনি ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, বঙ্গোপসাগরে নৌবহর পাঠিয়েছিলেন। নৃশংসতা ত্বরান্বিত করতে তাঁর পক্ষে যা করা সম্ভব তিনি তার সবই করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৯ মাস ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা বৈশ্বিক অঙ্গনে আজও জেনোসাইড (প্রচলিত মতে গণহত্যা) হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া প্রসঙ্গে নোম চমস্কি বলেন, ‘আমি বলেছি যে এটি অনেক বড় অপরাধ ছিল। কিসিঞ্জারের কারণে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল লজ্জাজনক।’ চমস্কি বলেন, ভয়ংকর নৃশংস এসব ঘটনা বাংলাদেশকে স্বাধীনতার (মুক্তিযুদ্ধে বিজয়) দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এগুলো আধুনিক সময়ের গুরুতর অপরাধ।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘এথনিক ক্লিনজিং’কেও (জাতিগত নির্মূল) তিনি বড় ধরনের নৃশংসতা হিসেবে উল্লেখ করেন।