অনলাইন ডেস্ক:
প্রযুক্তির আধুনিকায়নে অপরাধের ধরন পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই সরকার স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে তুলছে।
বিজ্ঞান বা আধুনিকতা যেমন আমাদের সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি জীবনে ঝুঁকিরও সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সব সময় চেষ্টা ছিল এই আধুনিক জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এই বিশেষ বাহিনী (এসএসএফ) সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হবে এবং তাদের দক্ষতাও সব সময় বৃদ্ধি পাবে। সে জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নানা রকম সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকালে এসএসএফের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে তাঁর কার্যালয়ে (পিএমও) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূরাজনীতি যেমন পরিবর্তনশীল, তেমনি অপরাধ জগত্টাও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে, জীবনকে গতিশীল করার, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রকেও বিস্তৃত করছে। একইভাবে অপরাধী তথা জঙ্গিদেরও সুযোগ করে দিচ্ছে। কাজেই আমার সব সময় চেষ্টা ছিল এই আধুনিক জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা তাঁদের পরিবারই নয়, বিদেশি অতিথিরা এলে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে এসএসএফের একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। আর এটা একটা কঠিন দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ সদস্যদের সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বিদেশ থেকে যখনই যে এসেছেন, আমাদের এসএসএফ সদস্যরা এত চমত্কারভাবে তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন যার প্রশংসা প্রায় প্রত্যেকেই করেছেন। সবাই এসএসএফ সদস্যদের দক্ষতা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সফলতার পেছনেও এই এসএসএফ সদস্যদের অনেক অবদান রয়েছে।’
তিনি বলেন, একদিকে যখন করোনা, তখন ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভূটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে প্রটোকল এবং নিরাপত্তা দেওয়া চ্যালেঞ্জিং ছিল। যাতে তাঁরা সফল হয়েছেন। এ জন্য এসএসএফের সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাঁর দল, সশস্ত্র বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সবার অবদানের কথাও তিনি স্মরণ করে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতার জন্যই এটা আমরা করতে পেরেছি।’
এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেসসচিব ইহসানুল করিম অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন তিনি প্রথম সরকার গঠন করেন তখন থেকেই দেখেছেন এই স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যদিও দায়িত্ব পালনকালে তাঁদের নানাবিধ সমস্যা ছিল।
তিনি বলেন, যেহেতু বিভিন্ন বাহিনী থেকে এখানে সদস্যরা আসেন তাঁদের যেমন আবাসন সমস্যা ছিল, তেমনি প্রশিক্ষণের এমনকি ফায়ারিংয়ের জন্য আলাদা কোনো জায়গা ছিল না। যার সমাধান তাঁর সরকার করেছে।
ভাষণে সদ্যঃস্বাধীন দেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার উদ্যোগ এবং ১৯৭৫ পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর যে সেনা সদস্য ক্ষমতায় এসেছিল সে ইনডেমনিটি দিয়ে জাতির পিতার বিচারের পথ রুদ্ধ করে, খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে এমনকি কারাগারে থাকা ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত এবং ২২ হাজার বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। এমনই এক পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এক রকম জোর করেই দেশে ফিরে আসেন একটা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য। যে স্বপ্নটা দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম যারা আমার মা-বাবা এমনকি ছোট্ট ১০ বছরের শিশু ভাইটিকে পর্যন্ত হত্যা করেছে সেই ঘাতকের আঘাত সব সময় আমার জন্য প্রস্তুত।’
শেখ হাসিনা বলেন, তারপরও তিনি ফিরে এসেছিলেন যার একটাই লক্ষ্য ছিল—এই বাংলাদেশে সরকার গঠন করে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, জাতির পিতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ঘাতকদের বিচার করতে হবে।’ কারণ, ইনডেমনিটির কারণে তিনি যেমন হত্যা মামলা করতে পারেননি, তেমনি জিডিও করা সম্ভব হয়নি। এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকার তাঁদের পরিবারের অন্য কাউকেও মামলা করতে দেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। কারণ, জনগণই ছিল আমার একমাত্র শক্তি। আর ছিল আমার দল আওয়ামী লীগ। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি।’
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের পক্ষ থেকে ১০০টি গৃহহীন পরিবারের জন্য দুই কোটি টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট হস্তান্তর করেন এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান।
মুজিববর্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান সম্পাদিত ‘মুজিব-বাঙালি-বাংলাদেশ’ নামে একটি ই-বুক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং সরকার ঘোষিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার জন্য ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হয়। পরে এই বাহিনীকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স হিসেবে নতুন নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর প্রেষণে নিযুক্ত অফিসারদের নিয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স গঠিত।
সূত্র : বাসস।