অনলাইন ডেস্ক:
মৃত্যুর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প পুরুষ কর্মকর্তাদের খুঁজতে বলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ নিয়ে সংসদ অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটের নারী সংসদ সদস্যরা। তারা ওই প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। এটা যাতে বস্তবায়ন না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
এরপর প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনার সুযোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। তবে এ বিষয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা কোনো কথা বলেননি।
বাজেট আলোচনার এক পর্যায়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ বলেন, একটি দুঃখজনক বিষয়ে কথা না বললেই নয়। বলার জন্য কাল থেকে মন অস্থির হয়ে আছে। কিন্তু আমি আসলে সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীদের কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তার বড় প্রমাণ মাননীয় স্পিকার আপনি। আপনি ওই চেয়ারে বসে আছেন। বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নে বিস্ময় মনে করে সারাবিশ্ব। এই অবস্থায় নারীদের বিষয়টিকে আমরা যদি আবার সেই ধর্মের ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি তা সত্যই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, একটি সংসদীয় কমিটি থেকে প্রস্তাব এসেছে নারী ইউএনওদের গার্ড অব অনার প্রদানে বিরত রাখতে। অথচ একজন ইউএনও শিক্ষার অনেক স্তর পার হয়ে আসে। সেখানে পুরুষ বা নারী ভেদাভেদের সুযোগ নেই। সেখানে গার্ড অব অনার দিতে পারবে না, কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারি না। যারা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা একদিন নারীদের গার্ড অব অনার দেওয়া যাবে না- এমন প্রস্তাবও দিতে পারে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের দেশ এগিয়ে গেলেও আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে না। এই জায়গায় আমাদের আরো কঠোর হতে হবে।
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাসদ নেতা শিরীন আক্তার বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন কারণ দেখিয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ শুনে আমি বিস্মিত, হতবাক ও ব্যথিত। আমার সহকর্মীরা, এই সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা এমনটি উত্থাপন করতে পেরেছেন? প্রশ্ন জেগেছে। সংবিধানে বলা আছে, নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। সেই দেশে যখন এ ঘটনা ঘটে তখন আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই। জানাজার সঙ্গে সম্মান প্রদর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই।
স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমাদের সামনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, শুধু বাংলাদেশ নয় তিনি সারা পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করেছেন; একজন নারী ও সফল নেতা হিসেবে। আজকে আপনি স্পিকারের পদে বসে আছেন। এই সংসদে আমার বোনেরা সব বসে আছেন।
তিনি আরো বলেন, একটি জেলায় একজন জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি দিয়ে বলেছেন, কোনো হিন্দু ম্যাজিস্ট্রেট যেন মুসলমান বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এই সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদর্শন না করেন। কী অবস্থা তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে! স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল যখন সরকারে, সেই সময়ে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখি ফতোয়াবাজি দেখি। এ ধরনের ঘটনা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থেকে আসে, তা কিছুতেই বরদাশত করা যায় না।
সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন।
গত রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার প্রদানের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আয়োজন ও মহিলা ইউএনও’র বিকল্প পুরুষ কর্মকর্তা খুঁজতে বলা হয়।