অনলাইন ডেস্ক:
কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চিলমারী নদীবন্দর প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান ‘হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে’ গেয়েছেন। এই প্রকল্পসহ মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৬৫১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনাসচিব জয়নুল বারী, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘চিলমারী নদীবন্দরটি ঐতিহ্যবাহী বন্দর। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর আসামের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এর গুরুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। এখন আবার নতুন করে ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে বন্দরটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে।’ তিনি আরো বলেন, “এই প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিখ্যাত একটি গান আছে না, হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে।… একটা গান আছে না, কেউ কি বলতে পারবেন?’ এ সময় তিনি গানটি গেয়ে ওঠেন।”
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এক-দুই মাসের প্রশিক্ষণ না দিয়ে ১০ মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে কৃষিতে উন্নতমানের গবেষণার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নদীগুলো মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি যেখানে-সেখানে স্লুইস গেট না করারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বেশি করে সাইলো নির্মাণ, আলুসহ অন্যান্য ফসলের টিস্যু কালচার বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।
প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর জন্য সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ২১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৬৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৭৯৪ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বরিশালে পাণ্ডব-পায়রা নদীর ওপর নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণ, মধুপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, চিলমারী এলাকায় নদীবন্দর নির্মাণ, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-এর আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলাধীন ব্রাহ্মণগ্রাম-হাটপাঁচিল ও তত্সংলগ্ন এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ এবং বেতিল স্পার-১ ও এনায়েতপুর স্পার-২ শক্তিশালীকরণ কাজ, ঠাকুগাঁওয়ের টাঙ্গন ব্যারাজ, বুড়িবাঁধ ও ভুল্লি বাঁধ সেচ প্রকল্পগুলো পুনর্বাসন, নদী তীর সংরক্ষণ ও সম্মিলিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ, জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিবীজ উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ, গাজীপুর জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প।
‘ফেরাউনও আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে পারেনি’ : দেশে নানা ঘটনায় আমলাদের বাড়াবাড়িতে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ‘আমলাতন্ত্র ভালো। এর বিকল্প সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও ফেরাউনও বের করতে পারেনি। আমরা সেই মহান আমলাতন্ত্রের জন্য সাভারে যে প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে সেটা প্রশস্ত করতে চাই।’