অনলাইন ডেস্ক:
সারা দেশকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে রেল যোগাযোগকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার মধুখালী-কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্রবান্ধব পরিবহন হিসেবে মানুষের যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য যেসব জায়গায় এখনো রেললাইন নেই সেসব স্থানে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে সমগ্র বাংলাদেশ রেল যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসা তাঁর সরকারের লক্ষ্য। পাশাপাশি ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যেসব স্থানের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেগুলো পুনঃস্থাপন করে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন করতে চায় সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইনে কেনাবেচা, ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে; বড় মাধ্যম হতে পারে রেল। এ সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
ম্যাঙ্গো ট্রেনের উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়ঋতুর বাংলাদেশে জ্যৈষ্ঠ মাস মধুমাস হিসেবে পরিচিত এবং এই মাস বাঙালির প্রিয় ফল আম উৎসবের মাস। আমের মৌসুমে উত্তরবঙ্গের চাষিদের উৎপাদিত আম সাশ্রয়ী ভাড়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহনের জন্য ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এই ট্রেনে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে খরচ পড়বে মাত্র এক টাকা ১৭ পয়সা থেকে এক টাকা ৩০ পয়সা; যেখানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতি কেজি আম পরিবহনে খরচ পড়ছে ২০ টাকার মতো।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশেষ এই ট্রেন প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ছাড়বে বিকেল সাড়ে ৪টায়। রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এবং ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছবে রাত ২টায়। আম নামিয়ে রাতেই ট্রেনটি আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আমনুরা, রহনপুর, কাঁকন, রাজশাহী, হরিয়ান, সরদাহ, আড়ানী ও আবদুলপুর স্টেশনে থামবে বিশেষ এ ট্রেন।
রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধনের মাগুরা প্রান্তে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রেলসচিব সেলিম রেজা, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সর্বস্তরের মানুষ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ডাক ভবন উদ্বোধন
এর আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডাক অধিদপ্তরের নবনির্মিত সদর দপ্তর ডাক ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি ডাক বিভাগকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্য পরিবহনসহ আধুনিক নানা পরিবহন ব্যবসায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, অনলাইনে বাজার করাসহ যাবতীয় সেবা পাওয়া যায়। ডাক বিভাগ থেকেও যেন এসব আধুনিক সেবা দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ফলমূল, সবজি ও খাবার ওই গাড়িতে ভালো থাকে। কুলিং সিস্টেম রাখতে হবে, গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে ডাকঘরগুলোতে চেম্বারও করতে হবে, যাতে পণ্য ভালো রাখা যায়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন অত্যাধুনিক ডাক ভবনটি ১৪ তলা। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ভবনটির উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সূত্র : বাসস।