অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে সহায়তা হিসেবে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় চার কোটি ২৪ লাখ টাকা) দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওআই রামাদানকে পাশে রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইসরায়েল নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোনো বাংলাদেশি যদি ইসরায়েল সফর করেন বা করার চেষ্টা করেন তাহলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে।
ওই অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রায় ৪০ লাখ টাকার ওষুধসামগ্রী গ্রহণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম ওই ওষুধসামগ্রী হস্তান্তর করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জর্দানের মাধ্যমে এই মানবিক সহায়তা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য পাঠানো হবে।
এদিকে দুই দিন আগেই বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল বাদে সব দেশের জন্য বৈধ’ লেখা বাদ দেওয়াকে অগ্রহণযোগ্য বলেছিলেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত। এর প্রতিক্রিয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল ফিলিস্তিনের জন্য ওষুধসামগ্রী সহায়তা এবং ৫০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান ঘোষণা দেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সব সময় ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে আছি। ইসরায়েলকে আমরা স্বীকৃতি দিইনি এবং দেওয়ার কোনো ইচ্ছাও আমাদের নেই। কয়েক মাস আগে আমাদের পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল বাদে’ এই শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কারণে এবং এর সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।”
মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলার সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনির নির্যাতিত জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত দৃঢ় সমর্থন ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ফিলিস্তিনের জন্য সহায়তা করে আসছে। ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমানা অনুসারে দ্বিরাষ্ট্রের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনের সমস্যা বারবার তুলে ধরেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘আমি আবার বলতে চাই, আমাদের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা চাই না এ বিষয় নিয়ে কেউ আবার ঝামেলা তৈরি করুক।’
বাংলাদেশিদের ইসরায়েল সফরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই নীতি অব্যাহত আছে। কোনো বাংলাদেশি যদি ইসরায়েল সফর করেন তবে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’
সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে ভ্রমণ করা যাবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যেহেতু ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিইনি, সে জন্য আমাদের অনুমতির প্রশ্ন ওঠে না।’
অন্যদিকে বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর বাংলাদেশে আছি। ১৪ দিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর এ দেশের মানুষ আমাদের বিপুলভাবে সহায়তা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিপুল পরিমাণে অর্থ সহায়তা পেয়েছি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের দুটি ব্যাংক হিসাব করতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়েও টাকা পেয়েছি। আমরা এই সহায়তা গাজায় পাঠাব। তবে ঠিক কত টাকা পেয়েছি, তা এখনো হিসাব হয়নি। সহায়তা পাওয়া অব্যাহত রয়েছে।’
সংগৃহীত অর্থ কিভাবে সেখানে পাঠানো হবে জানতে চাইলে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ওই অর্থ দিয়ে মেডিক্যালসামগ্রী কিনে পাঠানো হবে।