অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের নির্দেশেই সাহিনুদ্দিন নামে ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যায় অংশ নেওয়া খুনির দলকে সমন্বয় করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন বেপারী। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার দুই আসামি রকি তালুকদার ও মুরাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ঘটনার দায় স্বীকারের পর গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এই দুজন। রকি ও মুরাদ রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। আসামি সুমনও ডিবি পুলিশের রিমান্ডে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। সাবেক এমপি আউয়ালসহ চারজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে শরিফ নামের আরেক আসমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে আটজন গ্রেপ্তার হলো। র্যাবের অভিযানে আরো দুজন আটক হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিবির উপকমিশনার (মিরপুর) মানস কুমার পোদ্দার বলেন, ‘মামলার মোটিভ পরিষ্কার। আসামিদের জবানবন্দি, প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ আছে। আরো কিছু আসামি পলাতক আছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
গতকাল রিমান্ডে থাকা আসামি রকি ও মুরাদকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তাঁরা স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার আসামি সুমন বেপারী ও রকি তালুকদারকে আদালতে হাজির করা হয়। একই সঙ্গে প্রথম দফায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে আসামি মুরাদকে আদালতে আনা হয়। পরে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সুমন ও রকির ১০ দিন এবং মুরাদকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সুমন ও রকির পাঁচ দিন এবং মুরাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত শুক্রবার এ মামলার প্রধান আসামি এম এ আউয়ালসহ তিনজনের ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসীর আদালত চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন জহিরুল ইসলাম বাবু ও হাসান। একই দিন এ মামলার অন্য আসামি দিপুর রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
ডিবি সূত্র জানায়, রাজধানীর পল্লবীর উত্তর কালশীর বুড়িরটেকে আলিনগর আবাসিক এলাকা নামে প্রকল্পের জমি দখলে রাখা নিয়ে বিরোধের জেরে হ্যাভেলি প্রপার্টিজের মালিক আউয়াল ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেন। স্থানীয় আরো কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে জমি দখল নিয়ে তাঁদের বিরোধ আছে। এর জের ধরে গত বছরও সুমনের নেতৃত্বে সাহিনুদ্দিনকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। আসামিরা আউয়ালের কম্পানির মহাব্যবস্থাপক আবু তাহেরের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় আরেকটি আবাসন প্রতিষ্ঠান, ভূমির স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বিরোধ আছে। এসব কারণে পক্ষে-বিপক্ষে মামলাও রয়েছে। এসব কারণে সাহিনুদ্দিন স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে সুবিধা নিতে চান এবং আউয়ালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সম্প্রতি দুই পক্ষের বিরোধে পল্লবী থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয় বলে জানায় ডিবির সূত্র।
গত ১৬ মে পল্লবীর ডি ব্লকের ৩১ নম্বর রোডে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার নির্মম দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে।