অনলাইন ডেস্ক:
মাঠে বিএনপির উপস্থিতি প্রায় নেই। তেমন তৎপরতা নেই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিরও। এই পরিস্থিতিতে ফাঁকা মাঠে হঠাৎ তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে অশুভ তৎপরতা নিয়ে আগানো এই শক্তি বর্তমানে পিছু হটেছে। কিন্তু তারা আবারও যেকোনো সময় ফিরে আসতে পারে—এমন আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ। তাই আদর্শিক মিত্র ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে নতুন করে ভাবছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর তাদের নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। কিছুটা মান-অভিমান থাকলেও এই উদ্যোগে দ্বিমত নেই ১৪ দলের শরিকদেরও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক বলেছেন, ১৪ দলের শরিকরা সরকারের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়। তবে তাদের একটি অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ তাদের তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ঘরোয়া সভাগুলোতে মূল্যায়নের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে সব ক্ষেত্রেই শরিকরা সরকার থেকে উপেক্ষিত। বিপদে পড়লে বা প্রয়োজন হলে শরিকদের কাছে টানে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থার পরিবর্তনে উভয় পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা দরকার। একসঙ্গে মাঠে নামলে তৈরি হওয়া দূরত্ব কেটে যাবে, এ চিন্তা থেকেই সরকারপক্ষ শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশে এখন স্বাভাবিক অবস্থা নেই, লকডাউন চলছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো কর্মসূচি নিয়ে আগাম চিন্তা-ভাবনা হয়নি। তবে ১৪ দলের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। কয়েক দিন আগেও ওয়েবিনারে তাঁরা আলোচনা করেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, হেফাজতের তাণ্ডবের পর এ নিয়ে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ নেই। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ যদি মনে করে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৪ দলকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে পারে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, গত মার্চ ও এপ্রিলে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে অনলাইনে দুটি আলোচনাসভায় তাঁরা অংশ নিয়ে কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার ইস্যুটি ছিল। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর জেলায় জেলায় সভা-সমাবেশ করার প্রাথমিক একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, কৌশলগতভাবেও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কোনো ঐক্য হতে পারে না। সেটি এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করতে হলে শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে থাকলেই চলবে না, জনগণের দরবারে হাজির হওয়াও জরুরি। তাই ১৪ দলের রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা এখনো ফুরিয়ে যায়নি বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাছাকাছি আসে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিকরা। ২০০৪ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ১৪ দলের। ওই সময় একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম ও জয়ী হয়ে ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর সরকারে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় শুধু সাম্যবাদী দল।
পরবর্তী সময়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রী বানানো হয়। বতর্মান সরকার গঠনের সময় আবারও শরিকরা বাদ পড়ে এবং সেই থেকে ১৪ দলের শরিকরা ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তি হেফাজতে ইসলামকে কাছে টেনে নেয় সরকার। আমন্ত্রণ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে পর্যন্ত ঢুকে পড়ে তারা। আদায় করে নেয় নানা সুযোগ-সুবিধা।
তা সত্ত্বেও সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি হেফাজত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যকে ইস্যু করে দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক এই সংগঠনটি নিজেদের চরিত্র পুনরায় প্রকাশ করে। গত মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ঠেকাতে হেফাজত পৈশাচিক হামলা চালায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর পরই টনক নড়ে ক্ষমতাসীনদের। কৌশলগতভাবেও যে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে ঐক্য হতে পারে না, তা তারা টের পায়।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র ১৪ দলের নেতারা বলছেন, ওই ঘটনার পর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাঁদের দুটি বৈঠক হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৯ মার্চ এবং সর্বশেষ মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ১৭ এপ্রিল অনলাইনে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। ওই সময় ১৪ দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।