অনলাইন ডেস্ক:
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নথিপত্রের তথ্য চুরির অভিযোগে হওয়া মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এরপর প্রিজন ভ্যানে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার।
অন্যদিকে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
এদিন সকাল ৮টায় সাংবাদিক রোজিনাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার। পরে শুনানি শেষে ওই আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। একই সঙ্গে রোজিনার জামিন শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মে) নির্ধারণ করেন আদালত।
আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ১৭ মে বিকেল ২টা ৫৫ মিনিটে আসামি রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে প্রবেশ করেন। ওই সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করার সুযোগে আসামি রোজিনা দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তাঁর নিজ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলার সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে আসামি রোজিনাকে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কী করছেন জানতে চাইলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন।
পরবর্তী সময়ে অফিসের অন্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম আসামির শরীর তল্লাশি করে তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সংবলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তার নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে। যা যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াধীন। এ অবস্থায় আসামিকে জামিনে মুক্তি দিলে চিরতরে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনসহ সরকারি গোপনীয় ডকুমেন্টস নিজ হেফাজতে রাখার বিষয়ে ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামির পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাওয়া একান্ত প্রয়োজন।’
এর আগে আজ মঙ্গলবার (১৮ মে) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থানা থেকে পুরান ঢাকার সিএমএম আদালতে নেওয়া হয় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে।
গতকাল সোমবার (১৭ মে) সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ জানায়, সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে এবং শরীরে লুকিয়ে নথিপত্রের তথ্য চুরির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। রাতে পুলিশ হেফাজতে রোজিনা ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রোজিনা ইসলামের সহকর্মী ও স্বজনরা বলছেন, দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। গতকালই কভিড ভ্যাক্সিন নেওয়া রোজিনাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে আটকের প্রতিবাদে গতকাল রাতে শাহবাগ থানার ওসির কক্ষের সামনে অবস্থান নেন সহকর্মী-স্বজনরা। তাঁরা সেখানে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি করেছেন।