আজ দেশের স্বনামধন্য পত্রিকা দৈনিক সকালবেলা’র শুভ জন্মদিন। ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৫ বছরে পর্দাপণ করেছে। প্রতি বছর এই শুভ লগ্নে ছোট বড় আয়োজনে সম্পাদক ও প্রকাশক সৈয়দ এনামুল হক উপস্থিত থাকতেন। আজ তিনি সকালবেলা’র মাঝে নেই, হারিয়ে গেছেন চিরতরে পরপারে। তাঁকে আজ বিনম্র শ্রদ্বাভরে স্মরণ করছি। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্বাঞ্জলী। সেই সাথে সকল পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভাধ্যায়ীদের জানাই জন্মদিনে শুভেচ্ছা। দৈনিক সকালবেলা’র পরিবারের সকল সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
দেখতে দেখতে কিভাবে যে ২৪ টি বছর পার হয়ে গেলো তা প্রতিষ্ঠালগ্নে অনুমান করা যায়নি। “বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” এই আদর্শকে ধারণ করেই সকালবেলা আজ স্বগৌরবে ভাস্বর। দেশ ও জাতির কল্যাণে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সাংবাদিকতায় দৈনিক সকালবেলা আজ এতটা বছর পেরিয়েছে – এটা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যার অবদান অনস্বীকার্য, এই মহান মানুষটি হলেন সকালবেলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক সৈয়দ এনামুল হক।
যার হাত দিয়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠেছেন আজকের দৈনিক “সকালবেলা” পত্রিকাটি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সুদীর্ঘ ২৪টি বছর ধরে গৌরবের সাথে সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিগত ২৭ অক্টোবর ২০২০ইং বিকাল ৪ ঘটিকায় আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রাণপ্রিয় সম্পাদক সৈয়দ এনামুল হককে (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। সকালবেলা তাঁর অভিভাবককে হারালো। তাঁর কাছে থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার এবং জানার ছিল। দেশও জাতির আজ যে ক্ষতি হয়েছে, তা কখনো পূরণ হবার নয়। সাদা মনের সদাহাস্যোজ্জ্বল, বন্ধু বৎসল এই মহান মানুষটির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসা। আমরা তাঁর বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি। সৈয়দ এনামুল হক দৈনিক সকালবেলা পত্রিকাটিকে সন্তানের মত করে লালন করেছেন সুদীর্ঘ ২৪টি বছর। আজ এই খুশির দিনে তাঁর প্রতিটি স্মৃতির প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আজকের এই দিনে প্রতি বছরই তিনি ছোট বড় আয়োজন করতেন। এই প্রথমবার সম্পাদক আমাদের মাঝে নেই, তিনি চিরদিনের জন্য চলে গেছেন তাঁর সকালবেলাকে ছেড়ে, তাঁর প্রাণপ্রিয় “দৈনিক সকালবেলা” তিন বলেছিলেন ২৫তম (রজত জয়ন্তী) প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী জাঁকজমক করে আয়োজন করবেন, সকল প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবে। সেই স্বপ্ন তিনি পূরণ করার সময় পেলেন না। উল্লেখ্য যে, বিগত ২০১৪ সালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে, ১৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেন। তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জনাব সৈয়দ এনামুল হক অনেক প্রতিকুলতার মাঝেও সকালবেলা’কে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন যা গণমাধ্যম জগতে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সকালবেলা ছিলো তাঁর সন্তান সমতুল্য। বাবা-মা যেমন করে সন্তানকে আগলে রাখেন তিনিও তাই করেছেন। এটা ছিলো তাঁর দ্বিতীয় পরিবার। সকালবেলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি একাই দেশের সব বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা প্রতিনিধিদের সাথে ফোনে কথা বলতেন, তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা মনোযোগ সহকারে শোনতেন, সেই অনুযায়ী পরামর্শ দিতেন এবং তাদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যুগাতেন। সম্পাদক হিসেবে নয় একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই তিনি তাই করেছেন। দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে তুলেছেন একদল দক্ষ সাংবাদিক যারা আজো তাঁর নীতি, আদর্শ, সততা, নৈতিকতা নিয়ে অনবরত সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে।
জনাব সৈয়দ এনামুল হক ১৯৯৭ সালে প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক সকালবেলা যা ২০০১ সালে জাতীয় দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৭ সালে ৮ম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করেন। সৎ সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন নির্ভীক ও আপোষহীন। হলুদ সাংবাদিকতাকে তিনি মনে-প্রাণে ঘৃণা করতেন। আর এ কারণেই সকালবেলা দুই যুগ পেরিয়ে ২৫ বছরে পদার্পণ করতে পেরেছে। জনাব হক ছিলেন প্রচারবিমুখ,অসাধারণ প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, অনুকরণীয় একজন সাদা মনের মানুষ। দৈনিক সকালবেলা আজকের এই অবস্থানে আসার পথটা ছিলো বন্ধুর। ২৪ বছর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে দৈনিক সকালবেলাকে। কিন্তু সৈয়দ এনামুল হক সব বাঁধা-বিপত্তি দূর করে সকালবেলাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সাফল্যের উচ্চতম শিখরে। প্রিন্ট ভার্সনের পাশাপাশি তিনি অনলাইন ভার্সনেরও চালু করেছেন। রয়েছে সকালবেলার ই-পেপারও।
একদিকে দেশে মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব অন্যদিকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-এমন প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও সকালবেলা এগিয়ে চলেছে আপন মহিমায়। এটা সম্ভব হয়েছে কিংবদন্তীতুল্য সম্পাদক ও প্রকাশক সৈয়দ এনামুল হক’র দক্ষতা ও দূরদর্শিতার কল্যাণে। দৈনিক সকালবেলা গুরুত্বসহকারে যে কাজটি এখনো করে আসছে, সেটা হলো দেশ ও জাতির স্বার্থে ইতিবাচক সংবাদগুলো পাঠকের কাছে প্রকাশ করে যাচ্ছেন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের অগ্রপথিক হিসেবে সকালবেলা সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে আমরা দেখছি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক , বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসিকতা ও নেতৃত্বগুণের কারণে করোনার মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার প্রত্যয়। দেশের এই মহামারীর মধ্যে তিনি যেভাবে দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন আর কোনো সরকারপ্রধান পঁচাত্তরের পরে করেনি। সাংবাদিকগণ এসব কাজের স্বাক্ষী। একদিকে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ চলছে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’র বছর, বাঙালীর জীবনের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ঠিক সেই মুহূর্তেই করোনার হানা-তবুও থেমে নেই সকালবেলা পরিবারের কলম যোদ্ধারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আপনারা সাংবাদিক, আপনাদের স্বার্থরক্ষা করতে হলে আপনারা নিজেরাও আত্মসমালোচনা করুন। আপনারা শিক্ষিত, আপনারা লেখক, আপনারা ভালো মানুষ। আপনারাই বলুন, কোনটা ভালো, আর কোনটা মন্দ, গণতন্ত্রের একটা নীতিমালা আছে। সাংবাদিকতারও একটা নীতিমালা আছে, এ দুটি মনে রাখলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারবো। বঙ্গবন্ধুর এ কথার আলোকে বোঝা যায় যে, অনেক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের কারণে দেশ ও জাতি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিছু সাংবাদিকরা মাঝে মাঝে এই মহান পেশার কথা ভুলে যান।
জাতীয় দৈনিক সকালবেলা সব সময় ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে থাকে বলেই লাখো পাঠকের কাছে আজ বহুল সমাদৃত। লাখো পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত। একঝাঁক দক্ষ সাংবাদিকদের ক্ষুরধার লেখনীই সকালবেলার প্রকৃত সম্পদ এবং পথ চলার পাথেয়। তারাই সকালবেলাকে আরো বহুদুর নিয়ে যাবে। তিল তিল করে গড়ে ওঠা, এক এক করে ২৪টি বছর পেরিয়ে ২৫ তম বছরে পদার্পন করেছে সকালবেলা যার হাত ধরে, তিনি আজ আমাদের মাঝে সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ছায়া হয়ে আমাদেরকে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। আরো বেশি কাজ করতে স্পৃহা যুগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরই হাতে গড়া সকালবেলাকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যাবেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরীরা। সর্বোপরি, সবার ভলোবাসায় সকালবেলা আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের সংবাদ পত্রের জগতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আমার বিশ্বাস।