অনলাইন ডেস্ক:
‘বিস্ফোরক’ বক্তব্যের ব্যাখ্যা মির্জা আব্বাস কিভাবে দেবেন—তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। কারণ ওই ব্যাখ্যার ওপরই দলে তাঁর ‘ভবিষ্যৎ’ নির্ভর করছে বলে অনেকে মনে করছেন।
যদিও মির্জা আব্বাসের মতো পুরনো ও ত্যাগী নেতাকে সহজে বহিষ্কারের সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হচ্ছে। তার পরও তিনি ‘নরম নাকি গরম (কঠোর)’ জবাব দেবেন তা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন কৌতূহলের শেষ নেই। তবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নন দলটির জ্যেষ্ঠ সদস্যরা। কৌশলগত কারণে নীরব রয়েছেন আব্বাস সমর্থক নেতারাও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্বাসের বক্তব্যের বিষয়ে কিছুটা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি যেকোনো মূল্যে দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ বজায় রাখতে চাইছেন। তিনি বলছেন, আব্বাসের ওই বক্তব্যের বিষয়ে ছাড় দেওয়া হলে ভবিষ্যতে দলের বিরুদ্ধে কথা বলার আরো সুযোগ তৈরি হবে।
আব্বাসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তারেক রহমানের কাছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইলিয়াস আলী নিখোঁজ প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। এক-এগারোর পর থেকে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন তারেক রহমান। অনেকের মতে, আব্বাসের বক্তব্যের কারণে তিনি কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
গত ১৭ এপ্রিল এক ভার্চুয়াল সভায় নিখোঁজের ৯ বছর পর বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে নিয়ে নতুন তথ্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ইলিয়াস আলীর ‘গুমের’ পেছনে দলের ভেতরে থাকা কিছু নেতাকে দোষারোপ করেন তিনি। তবে ওই সব নেতার নাম উল্লেখ না করে আব্বাস বলেন, দলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ওই ব্যক্তিদের সবাই চেনেন। আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি বলেও জানান তিনি।
তাঁর ওই বক্তব্যে বিএনপির ভেতরে-বাইরে তোলপাড় শুরু হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টি স্পষ্ট করার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একটি লিখিত বক্তব্য তৈরি করে সংবাদ সম্মেলনে সেটি পাঠ করার জন্য বলেন। কিন্তু সেটি বিবেচনায় না নিয়ে ১৮ এপ্রিল শাহজাহানপুরের নিজ বাসায় তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন এবং উল্টো তাঁর বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে দোষারোপ করেন। ফলে ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আব্বাসের বক্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানোর নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠি আব্বাসের বাসায় যায় গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার।
সূত্র জানায়, চিঠিতে তিন কার্যদিবস পরে অর্থাৎ আগামী ২৬ এপ্রিলের মধ্যে আব্বাসকে জবাব দিতে হবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ ২৪ এপ্রিল শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আব্বাসের বক্তব্যের বিষয়টি আলোচনা হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আবার অনেকের মতে, জবাব দেওয়ার দিনক্ষণ সামনে থাকায় আলোচনায় নাও আসতে পারেন।
এদিকে, মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, কিছুটা বিচলিত হলেও বিএনপির চিঠির জবাবের বিষয়ে তিনি এখনো চিন্তা করেননি। তবে আব্বাসের ঘনিষ্ঠজনদের কেউ কেউ বিএনপির জ্যেষ্ঠ দু-একজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, কঠোর জবাবের বদলে আব্বাসের নমনীয় হয়ে ব্যাখ্যা দিলেই ভালো হবে। তাতে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো যাবে। আবার নমনীয় হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার পরও দল ব্যবস্থা নেয় কি না কিছুটা সে আশঙ্কাও আছে। সূত্র মতে, এ কারণেই আব্বাসের ঘনিষ্ঠদের কেউ তাঁকে পরামর্শ দিতেও ভয় পাচ্ছেন।
মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত একজন নেতা জানান, বক্তব্যের ব্যাখ্যা আব্বাস কিভাবে দেবেন? তিনি তো সেদিন সংবাদ সম্মেলন করেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তারপর আবার ব্যাখ্যা চাওয়া ঠিক হয়নি।