অনলাইন ডেস্ক:
বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বক্তব্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন। তাঁরা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলেই মনে করছেন। তাঁদের দাবি, বিএনপি যে সব সময় মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করে আসছে, তা খোদ নিজ দলের নেতার স্বীকারোক্তিতে প্রমাণিত হয়েছে।
সরকারি দলের নেতারা জানিয়েছেন, সত্য উদঘাটনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। এ জন্য আওয়ামী লীগের ওই সব নেতা সরকার ও দলের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলছেন বলে জানান।
গতকাল সোমবার সরকারি দলটির কয়েকজন নেতা আরো জানান, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের দেওয়া নতুন এই তথ্য দলটির ধারাবাহিক মিথ্যাচার প্রমাণের জন্য ‘একটি দৃষ্টান্ত’। এ বক্তব্য জনসাধারণের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার করবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব মাধ্যমকে কাজে লাগাতে চায় তারা। এতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতি সম্পর্কে মানুষ অবহিত হবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন।
গত শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে এক ভার্চুয়াল সভায় দেওয়া বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি।’ এর পেছনে দলের ভেতরে থাকা কয়েকজনকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘ওই নেতাদের সবাই চেনেন।’ ঘটনার আগের রাতে দলীয় কার্যালয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে ইলিয়াসের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল বলেও দাবি করেন মির্জা আব্বাস। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। এত দিন বিএনপি অভিযোগ করে আসছিল, তাঁকে সরকারই ‘গুম’ করে রেখেছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘মির্জা আব্বাস যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন হয়তো নিজেও ভাবেননি তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে এত তোলপাড় হবে। এখন আবার সেই বক্তব্য তিনি অস্বীকার করছেন। তাই গণমাধ্যমের উচিত, মির্জা আব্বাসের ধারণকৃত বক্তব্য নতুন করে প্রচার করা।’
ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ৯ বছর পর মির্জা আব্বাস যখন এই বক্তব্য দিলেন, তার উচিত ‘উনি যখন ঘটনা জানেন তখন এর সঙ্গে কারা ছিল তাও, তাঁর জানানো উচিত’।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘অনেক পরে হলেও মির্জা আব্বাস সত্য স্বীকার করেছেন। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। এম ইলিয়াস আলী যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল তাঁর সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মির্জা আব্বাস অনলাইনে লাইভ মিটিংয়ে মুখ ফসকে সত্যিটা বলে ফেলেছেন। পরে দলের মধ্যে সমালোচনার মুখে তিনি সেই বক্তব্যের দায় গণমাধ্যমের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন। তবে সত্যিটা বলার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এবং আশা করি, তিনি ভবিষ্যতে আরো এমন সত্যি বলে দেবেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘মির্জা আব্বাসের বক্তব্যে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। বিএনপি যে গুম-খুনের রাজনীতিতে জড়িত, তা প্রমাণিত হয়েছে। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনার সঙ্গে বিএনপির আর কারা কারা জড়িত, তা মির্জা আব্বাসের বলে দেওয়া উচিত।’ এতে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার সত্য প্রকাশিত হবে বলে তিনি মনে করেন।