অনলাইন ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় এবার অভিযুক্ত হচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। প্রথমে আড়ালে থাকলেও এবার শীর্ষ নেতাদের নাম মামলায় উঠে এসেছে। এরই মধ্যে রাজধানীর পল্টন থানায় করা দুটি মামলায় দলটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকে আসামি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক ঘটনার পর এমন মামলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গত সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফ-উজ-জামান বাদী হয়ে ওয়ারীর এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা এবং বিস্ফোরক আইনসহ কয়েকটি ধারায় ১৭ জনের নামে শেষ মামলাটি করেন। এর আগে ২৬ মার্চের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছিল, যেখানে মামুনুলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের ৩৫ নেতার নাম রয়েছে।
পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগের প্রমাণ পেলেই হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তদন্তের পাশাপাশি এরই মধ্যে কয়েকজন নেতার ওপর নজরদারি শুরু হয়েছে। তবে হেফাজতের নেতারা বলছেন, শীর্ষ নেতাদের হয়রানির জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব মামলা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মামুনুল মামলায় হুকুমের আসামি। আমরা তদন্ত করব। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ডিসি আরো বলেন, ‘আসামিরা বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন, ২৬ মার্চ তাঁরা কোথায় ছিলেন, বায়তুল মোকাররমে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন কি না, তাঁরা নাশকতার নির্দেশ কিংবা উসকানি দিয়েছেন কি না, হামলার অর্থদাতা বা মাস্টারমাইন্ড কি না, তা শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সৈয়দ নুরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘যিনি মামলা করেছেন তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি টাইলসের আঘাতে আহত হয়েছেন। এই পরিচয়ে তিনি মামলাটি করেছেন। তাঁর অন্য কোনো পরিচয় আছে কি না তা আমরা খুঁজে বের করব।’
এ মামলায় মামুনুল হক ছাড়া ১৬ আসামি হলেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির, নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নায়েবে আমির মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী ও সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিন। এ ছাড়া রয়েছেন সংগঠনটির টঙ্গীর সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাসুদুল করিম, অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, সহকারী দাওয়া সম্পাদক মাওলানা মুশতাকুন্নবী, ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের ও দপ্তর সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব।
গতকাল মঙ্গলবার মামলাটির এজাহার গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৭ মে দিন ধার্য করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডলের আদালত।
এ ব্যাপারে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের প্রচার সম্পাদক মুফতি আব্দুল মুমিন বলেন, ঘটনার এত দিন পর এই মামলায় প্রমাণ হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানির জন্য এটি করা হচ্ছে। ২৬ মার্চের ঘটনায় পুলিশ পল্টন থানায় একটি মামলা করেছে, যেখানে কেন্দ্রীয় ও ঢাকার ৩৫ জনকে আগেই আসামি করা হয়েছে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারী ও কুমিল্লার নেতাদের নাম উল্লেখ করে কেন এখানে সাজানো মামলা? এঁরা তো ঘটনার সময় ঢাকা ছিলেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি সোনারগাঁর ঘটনার জের ধরে এই মামলা করা হয়েছে। আইনিভাবে হেফাজত এসব মামলা মোকাবেলা করবে।
এদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ২৮ মার্চের পর থেকে কয়েকজন নেতার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত শনিবার সোনারগাঁয় মামুনুল হকের অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে হেফাজতের এই নেতার ওপর বিশেষ নজরদারি শুরু হয়। নাশকতার নির্দেশদাতাদের সূত্রও খোঁজা হচ্ছে। এরই মধ্যে মামুনুল হকসহ কয়েকজন নেতার ব্যাপারে কিছু প্রমাণ মিলেছে। সরকারের সবুজ সংকেত পেলে মামুনুলসহ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। অন্যদিকে মামলা ও তদন্তের বিষয়টি টের পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন কয়েকজন হেফাজত নেতা।
গত ২৫ মার্চ থেকে হেফাজতের নাশকতায় অন্তত ১৭ জন নিহত ও সাংবাদিক, পুলিশসহ পাঁচ শতাধিক আহত এবং শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে