নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি।
মহামারী করোনাকালেও নাঙ্গলকোট উপজেলার প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাঙের ছাতার মতো কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য জমে উঠেছে। তাদের বাসা-বাড়ী এখন যেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব । অথচ সরকার মহামারী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে, কিন্তু নাঙ্গলকোটে শিক্ষকদের কেউ কেউ এই বিধিনিষেধ মানতে নারাজ।
ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন হতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে এক নির্দেশনা জারি করেছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানাযায়, নাঙ্গলকোট পৌরসভাসহ এই অঞ্চলের ১৬ টি ইউনিয়নে কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ।
মহামারী করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ-খোলার পাশাপাশি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের রোষানলে পড়ে দেউলিয়ার পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থা।
শিক্ষকদের অবৈধ প্রাইভেট কিংবা কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বর্তমান সরকার একটি বিশেষ নীতি প্রণয়ন করলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব । অথচ নীতিমালা বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে চলছে কতিপয় শিক্ষকদের অবৈধ কোচিং বাণিজ্য। চলমান করোনাকালে এবং নানাবিধ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছে ওই সব শিক্ষকদের কাছে। বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা ও কিন্টারগার্ডেন সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষকদের কাছে এ কোচিং বাণিজ্য এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মত প্রসার ঘটেছে।
এই উপজেলা সরকারি-বেসরকারি ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত ক্লাসে ইংরেজী, গণিত, আইসিটি, হিসাব বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ান না। আবার অনেক শিক্ষককে করোনার পূর্বে বিদ্যালয়ে পাঠদান কালীন সময়ে তাদের কাছে প্রাইভেট ও কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ এবং কেউ কেউ ঐ সময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিজেদের কোচিং বাণিজ্যে সময় দিয়েছেন। এলাকার অবিভাবকদের একাধিক সূত্র জানায়, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় নাঙ্গলকোট পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া চলছিল দায়সারাভাবে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটিতে অনভিজ্ঞ, দলীয় নেতা-কর্মী ও অশিক্ষিত লোকদের স্থান পাওয়ায় গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে। যে কারণে চলমান করোনাকালে ও শিক্ষকদের বাসা- বাড়িতে গিয়ে আর কোচিং, প্রাইভেট পড়া ছাড়া শিক্ষার্থীদের উপায় নেই।
মহামারী করোনার এ সুযোগে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ঐসব কোচিং বাণিজ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১৫/২০ দিন পড়া বাবত বিষয়প্রতি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ওই শিক্ষকদের দিতে হয়।
এ অঞ্চলে ছোট-বড় প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষকদের প্রাইভেট কিংবা কোচিং ব্যবসা রয়েছে। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার কারণে বন্ধ রাখলেও এই অঞ্চলে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো খোলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তারা নানা অজুহাত দিয়ে বিদ্যালয় অফিস কক্ষ খোলা রাখার কথা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিনহাজ উদ্দিন জানান, মহামারী করোনাকালে সরকারি সিদ্ধান্ত মতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সুযোগ নেই। শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য চালানোর কোন প্রশ্নই উঠে না। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহি অফিসার সহ মনিটরিংয়ে বের হবো।আর সঠিক তথ্য মতে বিদ্যালয় খোলা রাখা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।