Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
১৯৭১ সালে পাকিস্তান গণহত্যা চালিয়েছিল

১৯৭১ সালে পাকিস্তান গণহত্যা চালিয়েছিল

অনলাইন ডেস্ক:

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তান গণহত্যা (হত্যাকাণ্ড, গণবাস্তুচ্যুতিসহ জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করার অপরাধ) চালিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি। গত সোমবার ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধু, ১৯৭১ সাল ও বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করার সময় একাত্তরের ‘জেনোসাইডের’ কথা স্বীকার করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান সরকার জেনোসাইডের জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে—এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো ইঙ্গিত নেই। কিন্তু পাকিস্তানের জনগণের উচিত তাদের সরকারকে আহ্বান করা, যাতে তারা বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতনের জন্য ক্ষমা চায়।

হুসেইন হাক্কানি ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটন ডিসির হাডসন ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের পরিচালক ও সিনিয়র ফেলো। এর আগে ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক কূটনীতিক বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ‘জেনোসাইড’ চালিয়েছিল বাংলাদেশে। এবার পাকিস্তানের একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকও ‘জেনোসাইডের’ কথা স্বীকার করলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা’ ও ‘পিতা’ হিসেবে অভিহিত করেন পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হাক্কানি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সফল রাষ্ট্র। এর যাত্রা শুরু করেছিলেন শেখ মুজিব। এখন দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হাক্কানি বলেন, ১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশকে বিশ্বের ‘সম্ভবত সবচেয়ে খাদ্যাভাবের ও সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। বন্যা, খড়া, যুদ্ধে ধ্বংস, আমলাতন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা, ব্যাপক দুর্নীতি—এটি ছিল তখনকার পরিস্থিতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার পর হেনরি কিসিঞ্জার একে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি। ভারত, পাকিস্তান, নেপালের চেয়ে স্বাক্ষরতার হার বেশি বাংলাদেশে।

হাক্কানি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দুবার স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন। একবার ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে। অন্যটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানি আমলাতন্ত্র ও সামরিক বাহিনী মিলে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করেছে।’

বঙ্গবন্ধুকে দেখার স্মৃতিচারণা করে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবকে জীবনে একবার সামনাসামনি দেখেছি। তখন আমার বয়স ১৪ বছর। তিনি ১৯৭০ সালে আমার করাচি শহরে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে এসেছিলেন। তাঁর জনসভায় মূল লোক ছিল বাঙালি। তিনি বলেছিলেন, কেন অবিচার; প্রায়-উপনিবেশ শাসন আর চলতে পারে না। আমার মতো তরুণের কাছে তাঁর কারিশমা ছিল দারুণ।’

হাক্কানি বলেন, ‘আমরা অবাঙালিও কিছু ছিলাম। আমার ক্ষেত্রে, আমি এমন একজন বাবার ঘরে জন্ম নিয়েছি যার ভাবনা ছিল ভিন্ন, যা পাকিস্তানজুড়ে ভালো চোখে দেখা হতো না। শেখ মুজিবের আহ্বান পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। বনেদি শ্রেণি পূর্ব পাকিস্তানকে কেবল শোষণের ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছিল।’

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭১ সালে জয়ের পরও শেখ মুজিবকে প্রধানমন্ত্রিত্ব না দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শেখ মুজিবের জন্য কারাগার নতুন কিছু নয়। কারাগারই ছিল শেখ মুজিবের দ্বিতীয় বাড়ি। পাকিস্তান আমলে তিনি ২২ বার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জীবনের ১০টি বছর, জীবনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ সময় তিনি কারাগারে ছিলেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

হাক্কানি আক্ষেপ করে বলেন, শেখ মুজিব যে কত বড় মাপের নেতা ছিলেন তা বিশ্ব ধারণা করতে পারেনি। বিশ্ব জানলে আজ মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার কাতারেই রাখা হতো শেখ মুজিবকে।

পাকিস্তানের সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বাঙালির মধ্যেই সবচেয়ে বিখ্যাত নেতা নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়া তথা ইতিহাসের অন্যতম নেতা, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের এক প্রতীকী ব্যক্তিত্ব।’

হাক্কানি বলেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল ওই সময়ে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। কারণ, বেশির ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো এই পূর্বাঞ্চল থেকে। পাকিস্তানের সামন্ত শাসকরা কখনোই বাঙালিদের সমমর্যাদা দেননি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতেও তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন না।

ওয়েবিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে সামরিক বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চাইবে এটি সবাই আশা করেছিল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শেষ মুহূর্তে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি ‘জেনোসাইডের’ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।

ব্রাসেলসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহাবুব হাসান বলেন, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হাক্কানির মন্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে বুঝতে আরো বেশি সাহায্য করবে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply