অনলাইন ডেস্ক:
১৯৭১ থেকে ২০২১। ৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রশংসা এখন সারা বিশ্বে। ১৯৭১ সালে বর্বর নিপীড়ন, জেনোসাইড হচ্ছে জেনেও যে দেশগুলো কার্যত নিশ্চুপ ছিল বা স্বাধীন বাংলাদেশকে যারা স্বীকার করতে চায়নি, সুবর্ণ জয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশের তারিফ করেছে তারাও। জাতিসংঘের সদস্য পদ পাওয়ার প্রশ্নে ‘ভেটোর’ শিকার হওয়া বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম শান্তিরক্ষী জোগানদাতা। বাংলাদেশের সাফল্য গর্বের সঙ্গে প্রচার করে জাতিসংঘও।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গত ১৭ থেকে ২৬ মার্চ ঢাকায় ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠান ঘিরে বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনসংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তারা বিশেষভাবে প্রশংসা করেছে এ দেশের বর্তমান নেতৃত্বের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গত প্রায় ১২ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন এখন সবার কাছেই বিস্ময়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি-সাফল্য সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমসের খ্যাতিমান সাংবাদিক নিকোলাস ক্রিস্টোফ কলাম লিখে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে পরামর্শ দিয়েছেন দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের দিকে তাকাতে।
সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান পর্যায়ের অতিথিদের সশরীরে বা ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়াকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থার প্রতিফলন হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে সক্ষম হয়েছেন।
উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের সব দেশই এখন বাংলাদেশকে সম্ভাবনার দেশ হিসেবে দেখে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুলাইহান গতকাল রবিবার বিকেলে বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সফল রাষ্ট্র। শান্তি রক্ষা কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্বে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বসম্প্রদায়ের সমর্থন ও আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ৫০তম স্বাধীনতা দিবসে। বাকিংহাম প্যালেস, ডাউনিং স্ট্রিট থেকে শুরু করে হোয়াইট হাউস, ক্রেমলিন—গুরুত্বপূর্ণ কেউই বাদ যায়নি শুভেচ্ছা জানানোর দৌড়ে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং শুভেচ্ছা জানাতে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। ঢাকায় চীনা দূতাবাস বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য উপহার দিয়েছে।
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুবরাজ চার্লস, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আলাদাভাবে পাঠানো বার্তায় বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেছেন। আলাদাভাবে বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি থেকেও শুভেচ্ছাবার্তা এসেছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিশ্বের অনেক অঞ্চলের চেয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ ও স্থিতিশীল। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক আকর্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলছে, সবাই এখন এর অংশীদার হতে চায়। ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট বলয়ে নেই। বাংলাদেশ সবার সঙ্গেই আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বকে আকৃষ্ট করেছে। ভৌগোলিকভাবে ভারত ও চীনের মধ্যবর্তী স্থানে এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে এটি একটি বিশাল বাজার। সবাই এ দেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চায়। গুরুত্বের কারণেই কভিড মহামারির মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহ দেখিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানই বাংলাদেশে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিল না। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানের শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ হওয়ার পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গুণগান করেছেন। এর পাশাপাশি তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের সৌভাগ্য যে তারা শেখ হাসিনার মতো একজন নেতা পেয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তো অনেক আগেই বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন। আর বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন শেখ হাসিনা।
এবার ঢাকায় এসে মোদি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যাঁরা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করছিলেন, যাঁরা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যাঁরা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাঁদের ভুল প্রমাণ করছে।’
বিশ্বনেতাদের কেউ কেউ একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম ও বর্তমান নেতৃত্ব এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের অগ্রজদের ভাবনা ভুল ছিল।