অনলাইন ডেস্ক:
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বজ্রপাতের মতোই দুই বাংলায় তাঁর আবির্ভাব। দীর্ঘদিনের না ছাঁটা চুল, মুখভর্তি দাড়ি, পরনে ঢিলেঢালা শার্ট আর স্কিন টাইট জিন্স পরে যুবকটি কলকাতায় গাইলেন, ‘এই বেশ ভালো আছি।’ তারপর শুরু একের পর এক গানের হল্কাধারা। তরুণ, যুবক, খেটে খাওয়া মানুষ, বঞ্চিত জনতা মেরুদণ্ডে পেল শক্তি। সেই তিনি পুরো বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড সোজা করে এগিয়ে চলার শক্তি জোগানো মানুষ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান বাঁধবেন না তা কি করে হয়।
‘মানুষ যখন খুঁজছে মানচিত্র নতুন/ভাষার জন্য শূন্যে ছুটছে হাত/ঠিক ঠিক তখনই তুমি এলে/তোমার জন্ম বাংলার বাজিমাত। মাতৃভাষার তরোয়ালে দিলে শাণ/বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান….বন্দি থেকেছো সন্ধি করোনি/দিলে লড়াইয়ের ডাক/কোটি মানুষের কণ্ঠে তুলেছো শত্রু নিপাত যাক….’—বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাওয়া নচিকেতার গানটির কথা। আনুষ্ঠানিকভাবে রিলিজ হওয়ার আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে গত বুধবার রাতে কলকাতার রবীন্দ্র সদনে প্রথমবারের মতো গানটি গেয়ে শোনান নচিকেতা। একই সঙ্গে গানটির রেকর্ডও বাজিয়ে শোনান তিনি। এ সময় মিলনায়তন ভর্তি দর্শক-শ্রোতা তুমুল আবেগে আপ্লুত হয়, করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানায়। কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানের দৃশ্য ছিল এটি।
মিলনায়তনের বেশির ভাগ দর্শক-শ্রোতা নচিকেতার সঙ্গে গানটিতে কণ্ঠ মেলায়। পরিবেশনের আগে এই গানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন নচিকেতা চক্রবর্তী। দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তিনি গানটি লিখেছেন। সুর তাঁর নিজের। এটি এখনো রিলিজ হয়নি। তবে রেকর্ডেড কপি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে এই গানের বিষয়টি কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মোফাখখারুল ইকবাল জানতে পারেন। তারপর তিনি অনেক কষ্ট করে বাংলাদেশ থেকে এই কপি সংগ্রহ করে আনলেন।’ নচিকেতা বলেন, ‘রিলিজ হওয়ার আগেই আজ আপনাদের গানটি শোনাতে ইকবাল ভাই আমাকে বাধ্য করলেন। এটিই প্রথম স্টেজ। আপনারাই প্রথম শুনলেন।’
জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, ‘বরিশালে আমার মা-বাবার জন্ম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ছোট ছিলাম। তখন মা-বাবাকে দেখতাম রেডিওতে আকাশবাণীর সংবাদ শুনছেন। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় তখন তাঁদের আক্ষেপ করতে শুনেছি।’
নচিকেতা গতকাল বৃহস্পতিবার গানটি সম্পর্কে জানান, বাংলাদেশের নীলা মাহমুদ গানটি লেখার ব্যাপারে তাঁকে ধারণা দিয়েছেন। তিনি গানটি প্রডিউস করছেন। গানটির রেকর্ডিং হয়েছে কলকাতায়। ঢাকার কবি সৈয়দ আল ফারুক গানটি লিখতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলেও জানান তিনি।
নচিকেতা বলেন, ‘গানটি গেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা শুধু বাংলাদেশের মানুষেরই ছিল না। এটা আমরাও ধারণ করেছি। বিশ্বের সব শোষিত-বঞ্চিত মানুষের লড়াই ছিল মুক্তিযুদ্ধ। আর এই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
ড. মোফাখখারুল ইকবাল গতকাল বলেন, ‘গানটি রেকর্ডিং হওয়ার সংবাদ জানতে পেরে আমি নচিকেতাকে বলি তা শোনাতে। কিন্তু তিনি জানান, গানটি তাঁর মুখস্থ নেই। এটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে রিলিজ হয়নি। গানটির কপিও তাঁর (নচিকেতার) কাছে নেই। ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্য জেনে আমি কলকাতার বন্ধু তপন বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, এটি ঢাকায় কবি সৈয়দ আল ফারুকের কাছে রয়েছে। এরপর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এনে অনুষ্ঠানে শোনানো হয়েছে।’