আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়া শহরের এন.এস রোডের বাসিন্দা এমএমএ ওয়াদুদ পরিবারের ১ শত কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি দখলে নিতে পরিবারের ৬ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের মূল সার্ভার থেকে তৈরী করে মজমপুর এলাকায় ঐ পরিবারের ২৫ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি ৭৭ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া ঘটনার সংবাদ প্রকাশের সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০/১২ জনকে আসামী করা হয়। মামলা দায়েরের পর বেশ কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। জমি ক্রয় করতে বিনিয়োগকারী শহরের বড়বাজারের ব্যবসায়ী বেঙ্গল হার্ডওয়্যারের মালিক মহিবুল ইসলাম তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পরিষ্কার করেন এই ঘটনার সাথে কারা কিভাবে জড়িত। এই ব্যবসায়ী বলেছিলেন, সাবেক মজমপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর আসাদুর রহমান বাবু ও রাজু আহম্মেদ এর সহযোগিতায় তিনি মজমপুর এলাকায় এমএমএ ওয়াদুদের ঐ জমিটি ৭৭ লক্ষ টাকায় কয় করতে সম্মত হন। ১০ কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তি এতো কম দামে ক্রয় করার পর কোন জটিলতা হলে সেগুলো সামলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয় এই ব্যবসায়ীকে। সেখানে আসাদুর রহমান বাবু ও রাজু আহম্মেদের সাথে আরো কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম উঠে আসে। এছাড়াও আলামপুর বাজার এলাকার কৃষক আমিরুল ইসলাম তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তাকে ভাতা কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকার আসাদুর রহমান বাবু মেম্বর শহরের এক বাসায় নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকেসহ আর ৫ মহিলাকে কুমারখালী উপজেলা নির্বাচন অফিসে নিয়ে তাদের ছবি তোলা হয় এবং আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়। কৃষক আমিরুল ইসলাম মূলত এমএমএ ওয়াদুদ সেজে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করেন এবং সেখানে ভিখারী থেকে শুরু করে নিম্ন শ্রেণীর ৫ মহিলাকে এমএমএ ওয়াদুদের মা ও ৪ বোন সাজিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া হয়। একটি বেসরকারী টেলিভিশনের অনুসন্ধানী টিমের কাছে আমিরুল সকল ঘটনা খুলে বলেন এবং কোন কোন জায়গায় বা কোন কোন বাসায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয় তার বিস্তারিত জানান। যা ঐ বেসরকারী টেলিভিশনের ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়। কৃষক আমিরুল ইসলাম গ্রেফতারের পর ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তার জবানবন্দির সাথে ব্যবসায়ী মহিবুলের জবানবন্দি প্রায় মিলে যায়। আমিরুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসাদুর রহমান বাবু ও রাজু আহম্মেদের নামসহ প্রভাবশালী একটি চক্রের নাম উঠে আসে। এরপর মূলত এই এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় কারা কিভাবে জড়িত তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। মামলার বাদী এমএমএ ওয়াদুদ বলছেন, মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরের পর তদন্তের গতি মন্থর হয়ে যায়। দিন যত গড়াতে থাকে মামলার গতি তত মন্থর হতে থাকে। এখন এমন একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এতো বড় আলোচিত একটি মামলা অথচ দায়সারা তদন্তের মাধ্যমে মূল অভিযুক্তদের বাঁচাতে মামলাটির গতি থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলার বাদী এমএমএ ওয়াদুদ দাবি করেন, এই জালিয়াতির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আসাদুর রহমান বাবু ও রাজু আহম্মেদ এবং তাদের পিছনে থেকে যারা বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য এখন চেষ্টা করা হচ্ছে। আসাদুর রহমান বাবু জামিন নিয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজু গত মাসের ১৮ তারিখ স্যারেন্ডার করেছে এবং জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করেছে। রাজু গতমাসের ১৮ তারিখ স্যারেন্ডার করলেও বিষয়টি জানতেনই না মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হোসেন। এতেই প্রমান হয় মামলাটিকে গুরুত্বহীন করতে সব ধরনের প্রভাব কাজে লাগানো হচ্ছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের এক উপ-সচিবসহ ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে করেছেন কুষ্টিয়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। এামলার বর্তমান অবস্থা ও আসামীদের স্যারেন্ডার ও জামিন বিষয়ে কথা হয় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেনের সাথে। তিনি বলছেন, রাজু আহম্মেদের স্যারেন্ডারের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। আর আসাদুর রহমান বাবু হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, তদন্ত কাজ চলমান। এই মামলায় আসামীদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যেসব ব্যক্তির নাম এসেছে তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা অনেকটা নিরুত্তর দেওয়ার ন্যায় বলেন তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা চলছে। এই মামলার দৃশ্যমান কোন সফলতা বা অগ্রগতির বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি তিনি। এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে এতোবড় প্রতারণার ঘটনা সামনে আসার পর যখন সারাদেশে তোলপাড় চলছে তখন এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে সন্দিহান মামলার বাদী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিষয়ে কুষ্টিয়াবাসী পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন অথচ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজনের নিরবতা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এই প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতার কারনে মামলাটির ধীরগতি বা মামলাটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও দাবি সচেতন মহলের।