কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
সম্পত্তির লোভে নিজ বোনকে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ নদীতে নিক্ষেপ করে দুই ভাই। পরে বোন নিখোঁজ এই মর্মে থানায় সাধারণ ডায়রি করে। তবে এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি ঘাতক দুই ভাই শফিউল আজম ও শামীম হোসেনের। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক দুই ভাই বোন শামীমা বেগমকে (৪০) হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেছে। সোমবার বেলা ১১ টায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের কনফারেন্স রুমে কুষ্টিয়ার নবাগত পুলিশ সুপার খাইরুল আলম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া গ্রামের মৃত আশরাফ উদ্দিনের ছেলে বর্তমানে ঢাকার দক্ষিণখান কাঁচা বাজার সংগ্রামী সরণী রোডের ৩১২ নং বাসার বাসিন্দা শফিউল আজম (৫২) গত ৪ মার্চ কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় উপস্থিত হয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করেন। জিডি নং ১৫২। জিডিতে শফিউল উলেখ করেন তার বোন শামীমা বেগম (৪৪) গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর রানাখড়িয়ায় বেড়াতে যাবার উদ্দেশ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রওনা হন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮ টা পর্যন্ত বোনের সাথে মুঠোফোনে তার যোগাযোগ হয়। এর পর থেকে বোনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ রোববার কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকা থেকে প্রথমে শফিকুল আজমের চাচাতো ভাই একই এলাকার নায়েব আলী মৃধার ছেলে শামীম হোসেনকে (৪০) আটক করে। পরবর্তীতে ওই দিনই শাফিউল আজমকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম পুলিশকে জানায়, তার চাচাতো ভাই শফিউল আজম কিছু দিন আগে তার চাচাতো বোন শামীমাকে নেত্রকোনা নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে সাহায্য চান। একই সাথে শামীম পুলিশকে আরো জানায়, শামীমার মা মারা যাওয়ার পর চাচাতো ভাই শফিউল আজম অন্য এক মহিলাকে মা সাজিয়ে তার মায়ের নামে ঢাকায় ৬ তলা বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেয়। জালিয়াতি করে বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে শফিউলের পিতা আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে ছেলের নামে ঢাকায় সিভিল কোর্টে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার অন্যতম স্বাক্ষী ছিলেন বোন শামীমা বেগম। প্রায় ৩০ বছর আগে নেত্রকোনা সদরে শামীমের বিয়ে হলেও অল্প দিনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই থেকে শামীমা ঢাকাতে বাবার বাড়িতেই বসবাস করত। কিন্তু ভাই শফিকুল বোন শামীমাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করত। ভাইয়ের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য এক পর্যায়ে শামীমা তার স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। সম্পত্তি জালিয়াতির মামলায় যাতে বোন স্বাক্ষী দিতে না পারে এ জন্য দুই ভাই শফিউল ও শামীম বোন শামীমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শামীম হোসেন তার চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হন এবং পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নেত্রকোনা শহরের একটি হোটেলে ওঠেন। পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শফিউল আজম হোটেলে দুজন লোক পাঠায়। ভাড়াটিয়া দু জনের সহায়তায় শামীম চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য নেত্রকোনা সদর থেকে ১২ কি:মি উত্তর পূর্ব দিকে কংস নদীতে ফেলে দেয় বলে শামীম হোসেন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। গত ৩ মার্চ দুপুর পৌনে একটার দিকে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজন মহিলার লাশ উদ্ধার করে। মামলা নং ৮। তারিখ ৫/৩/২০২১ ইং। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম দাবী করেন গ্রেফতারকৃত দুই ভাই বোন শামীমা বেগমকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্য আসামীদেরকেও গ্রেফতারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। গ্রেফতারকৃত দুই আসামীকে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।