Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

মুজিবুরকে কেউ অবিশ্বাস কোরো না -ভাসানী

অনলাইন ডেস্ক:

৯ মার্চ, ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলন যথারীতি চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগে প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়ছে। সমগ্র প্রশাসন চলছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই। অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে হরতাল পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যেসব সরকারি অফিস খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, শুধু সেসব অফিস চালু থাকছে।

বাঙালির বর্ষীয়ান নেতা ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চলমান পরিস্থিতিতে জনসভা আহ্বান করলেন। ভাসানী কী বলেন, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে পল্টন ময়দানের জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে ভাসানী বলেন, “প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বলি—অনেক হয়েছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। লা কুম দ্বিনুকুম ওয়ালইয়া দ্বিন। অর্থাৎ ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’—এ নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও।” তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চের মধ্যে স্বাধীনতার দাবি না মানলে দুজন এক হব। শেখ মুজিবের সঙ্গে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘খামাখা কেউ মুজিবুরকে অবিশ্বাস করো না। মুজিবুরকে আমি ভালোভাবে চিনি। আমার তিনটি ছেলে, তার মধ্যে একটি মুজিব। শিগগিরই বাংলা স্বাধীন হবে।’ 

সভায় ভাসানী ১৪ দফা দাবি পেশ করেন। ওই জনসভায় আতাউর রহমান খানও বক্তৃতা করেন। তিনি কালবিলম্ব না করে বাংলার জাতীয় সরকার ঘোষণা করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানান।

আন্দোলনের জোয়ারে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বাসভবনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। সকালে পিআইএর বাঙালি কর্মচারীরা তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলে তিনি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন। দুপুর ১টায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে ছদ্মবেশী তিনজন পাগলের উপস্থিতি ঘটে। সন্দেহজনক ভাব দেখে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁদের কাছে তিনটি পিস্তল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের কাগজপত্র পাওয়া যায়।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি যে ক্রমে জটিল হয়ে উঠছে, তা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাঁদের পরিবারগুলোকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকায় জাতিসংঘের উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। জাপানের পররাষ্ট্র দপ্তর পূর্ববঙ্গে অবস্থিত তার দেশের নাগরিকদেরও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন পশ্চিম জার্মান সরকার তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সামরিক বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় আসবেন বলে সরকারিভাবে জানানো হয়। পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি এক প্রচারপত্রে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানায়।

সামরিক কর্তৃপক্ষ রাত ৯টা থেকে রাজশাহী শহরে আট ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে। রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন নৈশ কারফিউ জারির পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাৎ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। বিবৃতিতে অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply