অনলাইন ডেস্ক:
প্রকল্প তৈরিতে যাদের কারণে পরবর্তী সময়ে নতুন আইটেম যোগ করতে হয় এবং এর ফলে প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকল্প তৈরিতে যাদের কারণে ভুল হয়, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এক ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের পরিচালক হয়ে ঢাকায় বসে থাকেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সহ্য করবেন না। আপনারা সরকারের বিধি-বিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। কারো স্বার্থে, বাড়ির পাশে সেতু নয়, সাইড সিলেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ব্রিজ, সেতু নির্মাণের সময় নদীর যাতে গতি রোধ না হয়, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, সংশোধনের সময় দু-একটি আইটেম নতুন আসে, যার জন্য ব্যয় বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো—যখন প্রকল্প তৈরি করেছিলেন, এসব বিষয় কি দেখে দেননি?
আপনারা প্রকল্পের সাইটে যাননি? নাহলে নতুন সেতু কোথা থেকে পাচ্ছেন? এটা কেন আগে এলো না? এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন নয়, আমারও প্রশ্ন, আপনাদেরও প্রশ্ন ।’
তিনি আরো বলেন, ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধন করতে গিয়ে দাম বেড়েছে, অনেকগুলো আইটেম নতুন চলে এসেছে; যা মূল প্রকল্পের ডিজাইনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো, কারা ডিজাইন করেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অর্ডার দিয়েছেন—সংশ্লিষ্ট সকলকে চিহ্নিত করুন; কাদের গাফিলতির জন্য আমাদের প্রকল্পের ডিজাইনটা ইনকারেক্ট (ভুল) হলো, আমাদের সময় ও অর্থ অপচয় হলো। তাদের বিরুদ্ধে আপনারা আইনানুগ, বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। আগামীতে যাতে এমন না হয়, সে বিষয়ে সকলের প্রতি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন যে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সাবধান হয়ে যান।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একনেকে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পটির খরচ দুই হাজার ৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পের মূল খরচ ছিল তিন হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ছয় হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
১১ হাজার কোটি টাকার ৮ প্রকল্প পাস
একনেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরসহ আরো সাত প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ১৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ছয় হাজার ১৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। একনেকে পাস হওয়া বাকি সাতটি প্রকল্প হলো পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ, ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট, টাঙ্গাইল জেলার দশটি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ প্রকল্প, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশসাধন, ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প, হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প।