অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ। তাঁর বাড়ির সামনের সড়কে দীর্ঘদিন ধরে লোকজন ময়লা ফেলছিল। ব্যস্ততার কারণে অভিযোগ জানাতে সিটি করপোরেশনে যাওয়ার সময় পাচ্ছিলেন না। শেষে ময়লার ছবি তুলে সেটি ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে আপলোড করে দেন। পরের দিনই দেখেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসে সড়কের ওই ময়লা পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সরাসরি সিটি করপোরেশনে না গিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে তাদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারছি, আবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানও মিলছে, এটি সত্যি চমৎকার। অ্যাপটি চালুর পর এ পর্যন্ত আমি পাঁচটি সমস্যার কথা জানিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবগুলোর সমাধানও পেয়েছি। সেবা কার্যক্রমটি অব্যাহত থাকুক এটি চাই।’
নগরবাসীর সমস্যা, অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ জানতে ডিএনসিসি চালু করেছে মোবাইল অ্যাপ ‘সবার ঢাকা’। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গত ১০ জানুয়ারি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম এই অ্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরই আতিকুল ইসলাম নাগরিক সমস্যা সমাধানে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। চালুর পর মাস পেরোতে না পেরোতে নগরবাসীর কাছে অ্যাপটি বেশ সাড়া ফেলেছে।
‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে নাগরিক সেবা পেতে প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হয়। পরে অ্যাপে ঢুকে ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে লগইন করে করপোরেশনকে সমস্যার কথা জানানো যায়। জলাবদ্ধতা, আবর্জনা, মশা, সড়কবাতি, পাবলিক টয়লেট, নর্দমা, রাস্তা, অবৈধ স্থাপনা—এই আটটি ক্যাটাগরিতে নাগরিকরা তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারে উত্তর সিটিকে। বিষয় অনুসারে সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনে নির্ধারণ করা আছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। সমস্যা সমাধানের পর সিটি করপোরেশন ওই ছবি বা খবর ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে আপলোড করে। ফলে অভিযোগকারী ব্যক্তি তাঁর ফিডব্যাক জানতে পারেন।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, চালুর পর জানুয়ারি মাসে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে মোট ২৭৯টি সমস্যার তথ্য জমা পড়ে। এর মধ্যে সমাধান করা হয়েছে ১৮৯টি। নগরবাসী এখনো অ্যাপটি সম্পর্কে বিস্তারিত না জানায় ব্যাপক হারে সমস্যার কথা জানায়নি। জানলে দ্রুত বাড়বে সমস্যার তথ্য। ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে নাগরিকের সমস্যার তথ্য দেখে প্রথম ধাপে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হয় সিটি করপোরেশনকে। না নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি চলে যায় দ্বিতীয় ধাপের কর্মকর্তার কাছে। সেখানেও সাড়া না মিললে সমস্যার নোটিফিকেশন চলে যায় বিভাগীয় প্রধান কর্মকর্তার কাছে।
এই তিন ধাপেও যদি নাগরিক কোনো সমস্যায় সাড়া না মেলে তাহলে সর্বশেষ ধাপ মেয়রের কাছে চলে যায়।
উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম সাইদুর রহমান বলেন, ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এই অ্যাপে আট ক্যাটাগরিতে নাগরিকরা সরাসরি তাদের সমস্যার কথা আমাদের জানাতে পারে। সমস্যাগুলো সমাধানে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা আছেন। যেমন বর্জ্য সম্পর্কিত কিছু হলে সেটা আমার কাছে আসবে। এ নিয়ে আমরা সপ্তাহে একবার মনিটরিং মিটিং করছি। মিটিংয়ে মেয়রের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আমার কাছে বর্জ্যবিষয়ক ২০টি সমস্যার কথা এসেছে। নির্ধারিত সময়ে এর মধ্যে প্রায় সবগুলোর সমাধান করেছি। নগরবাসী এর জন্য আমাদের ধন্যবাদও জানাচ্ছে।’