খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: আগামী কালকের (শনিবার) খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া’র ডাকা একটি জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা বক্তব্যের প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ির সবমহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয় এই নেতার অভিযোগগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মূলত: একদশক ধরে পৌর অব্যবস্থাপনা, বর্তমান মেয়র রফিকুল আলমের নানা ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে খাগড়াছড়িতে পরিবারটির নানা অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক অনিয়মের বিষয়েই সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া সরব হয়েছেন।
এই মেয়র ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হবার পরদিন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে ব্যক্তি-পারিবারিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। মেয়র রফিক নিজ হাতে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন অনেককেই। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রজ (জেঠাতো ভাই) মো: শানে আলম, সাবেক কাউন্সিলর তপন কান্তি দে, মরহুম আওয়ামীলীগ নেতা এস এম শফি, আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী এবং প্রথম আলো’র ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধুরী অন্যতম।
‘আলম পরিবার’ নামে পরিচিত এই পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ইতোপূর্বে খাগড়াছড়ি শহর থেকে উপজেলা পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র অনেক নেতা এবং ব্যবসায়ী ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ শারীরিক-মানসিক হেনস্থার শিকার হওয়ায় এখন আর কেউ কথা না বললেও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া বরাবরই এই পরিবারের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার থাকেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের কলাবাগানস্থ বাসভবন ‘বৈঠক’-এ ডাকা এই সংবাদ সম্মেলনে ওয়াদুদ ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, খাগড়াছড়ি পৌরসভার বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম করোনাকালের বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে পৌর বাসিন্দাদের বঞ্চিত করে উপজেলা পর্যায়ে মেয়রের অনুসারীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শহরের দরিদ্র মানুষের আয়ের উৎস ‘ইজিবাইক/টমটম’ রেজিস্ট্রেশনের নামে তিনি ৫ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করেছেন। পৌর এলাকা এবং আশেপাশের ছোট বড় বাজার, গাছ-বাঁশ-বালু-ইট-কংক্রিট থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবহন এবং বালুমহাল থেকেও অন্যায্য টোল আদায় অব্যাহত রেখেছেন। মূলত: মেয়রের দুধর্ষ অনুসারীদের ব্যবসায়িক সুবিধা দিতেই এসব অপতৎপরতা চলছে। এছাড়া জেলার সবকটি বাজারের ইজারা, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, উন্নয়নের নামে ভূমি নেয়ার ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ, সালিশের নামে অর্থ আত্মসাৎ, বিচারের নামে নিজ হাতে মানুষকে শারীরিক নির্যাতন, সাংবাদিকদের শারীরিক হেনস্থার পাশাপাশি হুমকি-ধামকি’র কথাও তুলে ধরেন, বিএনপি নেতা ওয়াদুদ।
তিনি বিএনপি মনোনীতি ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে প্রার্থী ইব্রাহিম খলিলকে ‘ক্লিন ইমেজ’র প্রার্থী অভিহিত করে বলেন, মেয়র হবার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা খলিলের রয়েছে। খাগড়াছড়ি শহরের ‘সম্প্রীতি ও সহাবস্থান’ দৃঢ় করার জন্য খলিলের মতো নম্র-বিনয়ী-ভদ্র ও শিক্ষিত তরুণকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার কোন বিকল্প নেই বলে দাবি করেন, দুই বারের সংসদ সদস্য ওয়াদুদ। বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভূইয়া’র অভিযোগের বিষয়ে মেয়র রফিকুল আলমকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তাঁর মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।